আসানসোলে দলের শ্রমিক সংগঠনের মঞ্চ থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারি সটান জানিয়েছেন, এটিই হয়তো জেলা সভাপতি হিসেবে তাঁর শেষ বক্তব্য। —ফাইল চিত্র।
দলের সঙ্গে ‘মতবিরোধ’-এর জেরে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতির পদ থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে কি সরিয়ে দিতে পারে তৃণমূল? বুধবার এমন জল্পনা নিজেই উস্কে দিয়েছেন আসানসোল পুরসভার প্রধান প্রশাসক তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র। আসানসোলে দলের শ্রমিক সংগঠনের মঞ্চ থেকে তিনি সটান জানিয়েছেন, এটিই হয়তো জেলা সভাপতি হিসেবে তাঁর শেষ বক্তব্য। তিনি এমনও জানান যে, আপাতত তৃণমূলের কোনও সভা বা শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে তাঁকে দলের পক্ষ থেকে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে তিনি যে জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ ছাড়তে তৈরি, তা জানিয়ে প্রকাশ্য সভাতেই জিতেন্দ্র বলেছেন, ‘‘সিদ্ধান্তি নিয়েছি, বললে চলে যাব। কিন্তু মানুষের সঙ্গেই থাকব।’’
মানুষের কাছে তাঁকে ‘প্রতিশ্রুতি এবং দায়বদ্ধতা’ পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়ে জিতেন্দ্র বলেছেন, তাঁকে আর ‘ভয় দেখিয়ে’ রাখা যাবে না। তাঁর প্রকাশ্য ঘোষণা, ‘‘এক সময়ে তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে! আর ভয় দেখিয়ে রাখা যাবে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বললে চলে যাব। কিন্তু মানুষের সঙ্গেই থাকব। মানুষের বাইরে তো আর থাকতে পারব না!’’
তৃণমূলের বিধায়ক হয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক কারণে’ কেন্দ্রীয় অনুদান থেকে আসানসোলকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তোলেন জিতেন্দ্র। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে ওই মর্মে জিতেন্দ্র চিঠি পাঠানোর পর সোমবার থেকেই চাপানউতোর শুরু হয়। সমস্যা মেটাতে শীর্ষ নেতৃত্ব মঙ্গলবার কলকাতায় ববির সঙ্গে জিতেন্দ্রকে বৈঠকে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়নি। জিতেন্দ্র প্রথমে রাজি হলেও পরে বেঁকে বসেন। জানা যায়, একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার জিতেন্দ্র জানিয়েছিলেন, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর যা কথা হয়েছে, তাতে উত্তরবঙ্গ সফর সেরে মমতা বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফেরার পর ১৮ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার তাঁকে ডাকা হতে পারে। কিন্তু সেই ডাকের আগেই বুধবার রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসলেন এলাকায় ডাকাবুকো বলে জিতেন্দ্র!
আরও পড়ুন: পোস্টারে, ফেসবুকে শীল-সুনীল কি শুভেন্দু-পথের পথিক, দ্রুত বাড়ছে জল্পনা
আসানসোলের গ্রাফাইট কারখানার মেন গেটের সামনে বুধবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভা ছিল। সেখানেই জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘আমি মনে করছি, দলের জেলা সভাপতি হিসেবে হয়তো এটাই আমার শেষ বক্তব্য। কেননা কাল (মঙ্গলবার) রাতে কলকাতা থেকে আমাকে ১৮ তারিখ (শুক্রবার। যেদিন তাঁর সঙ্গে নেত্রীর বৈঠকের কথা) পর্যন্ত দলীয় সভা বা শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ নিষেধ সত্ত্বেও অবশ্য দলের শ্রমিক সমাবেশে এসেছিলেন জিতেন্দ্র। এবং সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দল কোনও ব্যবস্থা নিলে তিনি তৈরি বলেও জানান জিতেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘বিকেলের মধ্যেই যদি জেলা সভাপতির পদ ছাড়তে হয়, তবে আমার দু’মিনিট সময়ও লাগবে না। আমি ছেড়ে দেব!’’
আরও পড়ুন: বিনয় তামাংদের দলে টেনে গুরুংয়ের পাল্টা প্যাঁচ দিতে চলেছে বিজেপি
শুধু তাঁকেই নয়, পশ্চিম বর্ধমান জেলার নেতাদেরও আর ‘ভয় দেখিয়ে’ রাখা যাবে না বলে দাবি করেছেন জিতেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে আমরা বিধায়ক হয়েছি। দলের সমর্থন, দলের প্রতীক, দলের ভালবাসা ছিল। কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত ইমেজও এত খারাপ ছিল না যে, মানুষ আমাদের ভোট দিত না। কিছুটা আমাদের ব্যাক্তিগত ইমেজের জন্যও আমরা জিতেছি।’’ সেই সঙ্গেই জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘মানুষের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম, আজ যদি বলা হয় সেই প্রতিশ্রুতি তুমি পূরণ করতে পারবে না, যদি তোমার অধিকারের কথা বলো, তা হলে তোমায় চলে যেতে হবে, তবে এক সময়ে তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে! আর ভয় দেখিয়ে রাখা যাবে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বললে চলে যাব। কিন্তু মানুষের সঙ্গেই থাকব। মানুষের বাইরে তো আর থাকতে পারব না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy