মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
জনসমুদ্রের মাঝে পুড়ে ছাই হল রাবণ, মেঘনাদ ও কুম্ভকর্ণ। রেলশহরে ঐতিহ্যবাহী দশেরা উৎসবে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে গেল রাজনীতি!
দশেরা উৎসব কমিটির সভাপতি খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। রিমোটের মাধ্যমে তিনটি মূর্তিতে প্রতীকী তিরবিদ্ধ করেছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অথচ মঙ্গলবার শহরের নিউ সেটেলমেন্টের রাবণ ময়দানে আয়োজিত দশেরা উৎসবে শুভেন্দুর পাশে দেখা গেল না তৃণমূলের দুই নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে ও দেবাশিস চৌধুরীকে। গরহাজির ছিলেন অধিকাংশ কাউন্সিলরও। খড়্গপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরেই।
দশেরা উৎসবকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে সৌজন্য বিতর্কও। অনুষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে আসেননি বিজেপির কোনও নেতা। অথচ দশেরা উৎসব কমিটির সহ-সভাপতি হলেন বিজেপি নেতা প্রদীপ পট্টনায়েক। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাই জানি না। হয়তো আমারও যোগাযোগের অভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।” শেষ বেলায় আমন্ত্রণ জানানোয় আসেননি স্থানীয় সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “গত দু’বছর ধরে রাজনীতি জুড়ে গিয়েছে শহরের এই ঐতিহ্যবাহী দশেরা উৎসবে। টাকা দিয়ে কমিটিকে কিনে শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হচ্ছে। সেখানে তৃণমূলের সকলে আমন্ত্রণ পাচ্ছে। আর সাংসদকে সবশেষে একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ সব জানছে। উপ-নির্বাচনে এর ফল মিলবে।”
সৌজন্য বিতর্কের সূত্রপাত কয়েক বছর আগে। তদানীন্তন সাংসদ প্রবোধ পাণ্ডা মঞ্চে উপস্থিত থাকায় আসেননি তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। পরিস্থিতি বুঝে রাবণ বধের আগেই মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে হয় প্রবোধ পাণ্ডাকে। তার পরে আসেন ভারতী। গত দু’বছর ধরে কমিটিতে এসেছে বদল। কমিটির সভাপতি হয়েছেন পুরপ্রধান। এর পর থেকেই মুখ্য অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকছেন মন্ত্রী শুভেন্দু।
লোকসভা ভোটের পর দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরের তৃণমূল নেতাদের দ্বন্দ্ব মেটাতে চেষ্টার কসুর করেননি শুভেন্দু। তবু দশেরা উৎসবে তিনি পাশে পেলেন না রবিশঙ্কর এবং দেবাশিসকে। যদিও ছিলেন জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ, তৃণমূলের শহর কার্যকরী সভাপতি জহরলাল পাল। তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর বলেন, “বাড়িতে লোকজন থাকায় যেতে পারিনি। আমি সে কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম।” তবে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে দেবাশিসকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
১৯২৫ সাল থেকে রেলশহরে অশুভ শক্তির বিনাশের কামনায় এই দশেরা উৎসবের সূচনা হয়েছিল। মূলত ব্যবসায়ী সমিতির সহযোগিতায় উৎসব একেবারে অরাজনৈতিক কায়দায় পরিচালনা হত। আমন্ত্রণ পেতেন শহরের জন প্রতিনিধি থেকে আমলা, রেল আধিকারিক থেকে পুলিশ আধিকারিকেরা। স্থানীয় সাংসদ, ডিআইজি অথবা জেলা পুলিশ সুপার ও ডিআরএম রাবণ বধ করতেন। এতদিন এটাই ছিল রীতি। কিন্তু প্রদীপ দায়িত্বে আসার পর থেকেই শুরু হয় মেরুকরণ।
বিজেপি যখন দশেরা উৎসবের রাজনীতিকরণ, শেষবেলায় আমন্ত্রণ পাঠানোর অভিযোগ তুলছে, তখন তৃণমূলের দুই নেতার অনুপস্থিতি অস্বস্তি বাড়াচ্ছে শাসক দলের। প্রদীপ বলেন, “সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কে আসেনি সেটা বড় কথা নয়। লক্ষ-লক্ষ মানুষের ভিড়ে উৎসব সফল হয়েছে এটাই বড় বিষয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy