(বাঁ দিকে) শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা। —ফাইল ছবি।
গ্রেফতারির ছ’মাস পর শেখ শাহজাহানের বদলে সন্দেশখালি-১ ব্লকের নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করল তৃণমূল নেতৃত্ব। একই সঙ্গে সাত মাস কারাবন্দি সন্দেশখালি-২ ব্লকের সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুর বদলেও ব্লক সভাপতি বেছে নিল শাসকদল। সন্দেশখালি-১ ব্লকের সভাপতি করা হয়েছে মিজানুর রহমানকে। আর ব্লক-২-এর সভাপতি হয়েছেন দিলীপ মল্লিক। মিজানুর সন্দেশখালি-১ ব্লকের অধীন একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। বর্তমানে পঞ্চায়েত সদস্য। আর দিলীপ বর্তমানে সন্দেশখালি-২ ব্লকের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ।
শনিবার নতুন দু’জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হলে সেখানে সংগঠন দেখাশোনার জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাট লোকসভায় ভোট পরিচালনার দায়িত্বে পাঠান রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে। তাঁকে সাহায্য করা জন্য পাঠানো হয় জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে। লোকসভা ভোটে এই দুই নেতাই বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূলকে জেতাতে বড় ভুমিকা পালন করেন। ভোটপর্ব মিটে যেতেই নতুন সভাপতির অন্বেষণ শুরু হয়। জুলাই মাসেই নতুন সভাপতি হিসাবে দমকলমন্ত্রী নাম জমা দেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সম্প্রতি সেই নামে অনুমোদন দিয়ে পাঠানো হয় রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে। শনিবার তিনিই অনুমোদন দিয়ে সন্দেশখালির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুজিতকে নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা করতে নির্দেশ দেন। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পাওয়ার পরেই ওই দুই নেতাকে তাঁদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাত বলেন, ‘‘দিদি সভাপতিদের নামে সম্মতি দেওয়ার পর রাজ্য সভাপতি তাঁদের নামে অনুমোদন দিয়েছেন। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুজিত বসু নতুন ব্লক সভাপতিদের নিয়োগপত্র দিয়েছেন। এর ফলে সন্দেশখালির দু'টি ব্লকেই সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে আমাদের সুবিধা হবে।’’ প্রসঙ্গত, শাহজাহান এবং শিবুকে ব্লক সভাপতি করতে বড় ভুমিকা নিয়েছিলেন অধুনা কারাবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এক সময় তাঁর নজর দিয়েই গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজনীতিকে দেখতেন মমতা। কিন্তু গত বছর পুজোর পর রেশন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে ইডি। তার পর একই মামলায় ইডি হানা দেয় শাহজাহানের বাড়িতে। এর পর সন্দেশখালির মেয়েরা প্রতিবাদে নামলে ১৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন শিবু। আর ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন শাহজাহান। তার পর থেকেই শূন্য ছিল এই দুই ব্লকের সভাপতির পদ। অবশেষে, সেই দুই ব্লকের সভাপতি পেল তৃণমূল।
নতুন সভাপতি নিয়োগের পর তৃণমূলের লক্ষ্য ২০২৬ সালে সন্দেশখালি বিধানসভা দখলে রাখা। কারণ, বসিরহাট লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী হাজি নরুল ইসলাম বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে হারিয়ে ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৪৯ ভোটে জয়ী হলেও, সন্দেশখালি বিধানসভায় বিজেপি ৮ হাজার ৩৮৭ ভোটে এগিয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছিল ইডি। সেই সময়েই শাহজাহান অনুগামীদের হাতে মার খেয়ে আহত হতে হয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি)-এর আধিকারিকদের। সেই ঘটনার পর থেকে শাহজাহান ‘বেপাত্তা’ হয়ে যান। তার পর শাহজাহানের অনুগামীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামেন সন্দেশখালির একাংশের বাসিন্দারা। কার্যত গণরোষের মুখেই শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ দুই নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই থেকেই এই দু'টি ব্লকের সভাপতিহীন ছিল। শাহজাহান গ্রেফতার হন ৫৫ দিন পর। এরই মধ্যে লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যায়। তাই আর নতুন সভাপতি নিয়োগের সুযোগ পায়নি শাসকদল। কিন্তু, ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার মাস তিনেকের মধ্যেই সন্দেশখালির দু'টি ব্লকেই নতুন সভাপতি নিয়োগ করল তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy