—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কর্মবিরতিতে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত, এই অভিযোগকে হাতিয়ার করেই আর জি কর-কাণ্ডে পাল্টা চাপের কৌশল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। যথাযথ চিকিৎসা না-পেয়ে এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ফের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের দাবি জানাল শাসক দল। তবে আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানানোর পরে নিজের ফের অসন্তোষ ব্যাখ্যা করে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি তাদের (শাসক শিবির) চেতনা ফেরাতেই রাজনৈতিক আত্মহত্যা করেছি!’’
আর জি কর মামলার শুনানিতেও কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সূত্রেই সোমবার রাজ্য সরকার ও শাসক দল সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক করার বিষয়টির উপরে জোর দিয়েছে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা বলার পরে তা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত ২৩ জন সাধারণ মানুষ পরিষেবা না পেয়ে মারা গিয়েছেন। আজও দমদমের এক ডেঙ্গি রোগী মারা গিয়েছে। এটা মানবতার বিপক্ষে যাচ্ছে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রতিবাদ কখনই মূল দায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে সঙ্গত হতে পারে না। প্রধান বিচারপতিও সে কথা বলেছেন।’’
সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষের পরেই এ দিন এক্স হ্যান্ড্লে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো বার্তা প্রচার শুরু করে তৃণমূল। তাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিকে ন্যায্য হিসেবে মেনে নিয়েও চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয়, তা দেখতে অনুরোধ করেছিলেন। চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে রবিবার অভিষেকের অভিযোগ খণ্ডন করে দীর্ঘ বিবৃতির পরেও আগের অভিযোগ থেকে সরেনি তৃণমূল। তার পরেই নবান্নে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের তরফে ব্রাত্য বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত যে সব দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সাড়ে ৬ লক্ষ রোগী অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, কর্মবিরতি থেকে সরে আসুন।’’
পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরাও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “আন্দোলন জারি রাখবেন, না প্রত্যাহার করে নেবেন, সেটা জুনিয়র চিকিৎসকদের বিষয়। কিন্তু তাঁরা যদি আন্দোলন জারি রাখতে চান, বিজেপি তাঁদের পাশে থাকবে। রাজ্য সরকার যদি পদক্ষেপ করতে চায়, করতে পারে। যদি নিলম্বিত করে, করতে পারে। কত জন কে নিলম্বিত করবে, আমরাও দেখতে চাই!” পাশাপাশিই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতির মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আপনি জানেন আপনার দফতরের কী অবস্থা করে রেখেছেন? চিকিৎসকরা কাজে ফিরেই বা কী করবেন? মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবেন? আপনার দফতর বর্জ্য বিক্রি করে দিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে যে কারও সংক্রমক কোনও ব্যাধি হতে পারে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ওই সংখ্যা ২৩ কেন, সাড়ে তিন হাজারও বলতে পারতেন! যা খবর পাওয়া গিয়েছে, প্রশাসনের ভিতরে রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল ৮ জনের মৃত্যুর কথা বলে, সেটা পরে ২৩ করা হয়েছে। মনগড়া তথ্য এবং অভিযোগই যখন শাসক পক্ষ করবে, যে কোনও কিছুই বলতে পারে! তবে মনে রাখতে হবে, চিকিৎসা ব্যবস্থা কিন্তু শুধু জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরে নির্ভরশীল নয়।’’ সিউড়িতে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরা বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কখনওই সেবার কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনের কথা বলতে পারে না। আগেও সর্বোচ্চ আদালত চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে বলেছিল। মুখ্যমন্ত্রী আগেও ডাক্তারদের হুমকি দিয়েছিলেন। আসলে জুনিয়র ডাক্তারেরা মানুষের শত্রু, এটা প্রমাণ করার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে! আমরা মানুষের সেবা ও আন্দোলন এক সঙ্গে করা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।”
তৃণমূল অবশ্য ফের সিবিআইয়ের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলের সাংসদ পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘মূল যে বিষয়টি আমরা চাইছিলাম, তা থেকে আমরা কত দূরে সরে গিয়েছি! চিকিৎসক বোনের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্তেরা ধরা পড়বেন, সবাই তা-ই চেয়েছিলেন। কিন্তু ৬৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। আজও সিবিআইকে পরবর্তী শুনানির দিন একটি রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত!’’
ভিন্ন সুর ফের শোনা গিয়েছে ‘পদত্যাগী’ সাংসদ জহরের গলায়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথার পরেও ইস্তফার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন তিনি। জহর এ দিন বলেছেন, ‘‘সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমার প্রশ্ন, কেন? অভয়া বা তিলোত্তমা, যে নামেই বলুন, তাঁর কথা তো আছেই। তবে অভয়া-তিলোত্তমা ছাড়াও রাজ্য সরকারের উপরে কী রকম যেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষ। এটা অস্বীকার করলে কিন্তু যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁরা ভুল করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy