Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Governor CV Anand Bose TMC

রাজ্যপালকে ‘ধাওয়া’ করবে তৃণমূল, যেখানেই যাবেন, শুনবেন ১০০ দিনের কাজ ও আবাসের টাকার দাবি!

রাজভবনে না-ফিরলেও রেহাই পাবেন না রাজ্যপাল। রাজ্যের যেখানেই যান, তাঁকে শুনতে হবে ১০০ দিনের কাজের টাকা মাথা গোঁজার ছাদের দাবি! বৃহস্পতিবার যার সূত্রপাত হয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গে।

CV Anand Bose

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৪
Share: Save:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ‘গ্রাউন্ড জিরো’য় যাওয়ার পক্ষপাতী। সে দত্তপুকুর হোক বা রিষড়া, মোমিনপুর হোক বা ভাঙড়, কাকদ্বীপ হোক বা কোচবিহার। এ বার সেই রাজ্যপালকে ‘গ্রাউন্ড জিরো’তেই ঘেরার কৌশল নিচ্ছে তৃণমূল। শাসকদল সূত্রের খবর, অতঃপর রাজ্যপাল যেখানেই যাবেন, সেখানেই তাঁকে শুনতে হবে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার বকেয়া টাকা দেওয়ার দাবি।

রাজ্যপালকে রাজ্যের ‘সাংবিধানিক প্রধান’-এর চেয়ে বাংলায় নিযুক্ত ‘কেন্দ্রের প্রতিনিধি’ হিসাবেই দেখা শুরু করেছে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালকে ৫০ লক্ষ চিঠি দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাজভবন অভিযান ডেকেছিলেন অভিষেক। কিন্তু বোস কলকাতায় না ফেরায় অভিষেক রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, যত দিন না রাজ্যপাল রাজভবনে ফেরেন, যত দিন না তিনি তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাতের সময় দেন, তত দিন তাঁর ধর্না চলবে।

এরই পাশাপাশি রাজ্যপালকে ‘ধাওয়া’ করারও কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ, তিনি রাজভবনে না-ফিরলেও রেহাই পাবেন না। রাজ্যপাল যেখানে যে অনুষ্ঠানেই যান, তাঁকে শুনতে হবে ১০০ দিনের কাজের টাকা দিন! মাথা গোঁজার ছাদের বন্দোবস্ত করুন! যে কর্মসূচির পুরোটাই সংগঠিত করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতৃত্ব। বস্তুত, তার সূচনা হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারেই। রাজ্যপাল কোচি থেকে দিল্লি হয়ে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। পৌঁছেছিলেন জলপাইগুড়ির ত্রাণশিবিরে। সেখানেই বোসকে শুনতে হয়েছে, ১০০ দিনের বকেয়া টাকার বন্দোবস্ত করুন। দু’জায়গায় কালো পতাকাও দেখতে হয়েছে তাঁকে।

রাজ্যপাল বোসকে যে তৃণমূল রেয়াত করবে না, তা গত কয়েক মাস ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। এ-ও স্পষ্ট হচ্ছিল যে, সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় রাজভবনের উঠোনে মালয়ালি রাজ্যপালের বাংলায় হাতেখড়ি আসলে ছিল ব্যতিক্রম। বসন্ত চলে যেতেই সরকার ও শাসকদলের মধ্যে শৈত্য তৈরি হতে শুরু করে রাজ্যপালের। তা তুঙ্গে উঠেছে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের ‘সফল’ দিল্লি অভিযানের পর। এমনিতেই বিভিন্ন বিষয়ে রাজভবন-নবান্ন খটাখটি লেগেই ছিল। এ বার তা আরও চড়া মাত্রায় পৌঁছেছে। রাজ্যপালের সঙ্গে তৃণমূলের বাগ্‌যুদ্ধও শুরু হয়েছে।

যত্রতত্র রাজ্যপালকে ঘিরে ধরে তাঁকে কেন্দ্রের কাছে বকেয়া অর্থ এনে দেওয়ার দাবি জানানোর ফলে দু’টি বিষয় হওয়ার সম্ভাবনা। এক, রাজনৈতিক ভাবে এই ধারণা তৈরি করা যাবে যে, কেন্দ্রীয় সরকার তথা তাদের প্রতিনিধি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ‘গণক্ষোভ’ তৈরি হয়েছে। দুই, রাজ্যপালকেও ভাবতে বাধ্য করা হবে যে, যখন-তখন যেখানে-সেখানে তিনি চলে যাবেন কি না।

অভিষেকের ধর্নামঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে। সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, ‘‘আরএসপির সাংসদ প্রেমচন্দ্রনজি আমায় বলেছিলেন, জগদীপ ধনখড় চলে যাচ্ছেন বলে তোমরা আনন্দ পাচ্ছ! সিভি আনন্দ বোসকে তো জানো না, কী বজ্জাত জিনিস! এখন দেখছি ঠিকই বলেছিলেন তিনি।’’ প্রসঙ্গত, প্রেমচন্দ্রন কেরলের কোল্লামের সাংসদ। তিনি আগে ভিএস অচ্যুতানন্দন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। বোসও ছিলেন কেরলের আমলা। মহুয়া আরও বলেছেন, ‘‘অনেক রাজ্যপাল দেখেছি। এমকে নারায়ণন, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মতো রাজ্যপালেরা এসেছিলেন। আর এটা কে!’’ সুর আরও চড়িয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আগে ভাবতাম রাজ্যপাল বিজেপির দালাল। তার পর মনে হত নরেন্দ্র মোদীর দালাল। তার পর এক দিন ভাবলাম, নিশ্চয়ই ইনি অমিত শাহের দালাল। এখন দেখছি ও সব কিছু না। এ আসলে শুভেন্দু অধিকারীর দালাল! আরে দালালদেরও তো একটা গ্রেড থাকে! এ হল শুভেন্দুর দালালি করার গ্রেডের।’’

তবে রাজভবনের সিংহদরজার অদূরে মঞ্চ থেকে আক্রমণাত্মক বক্তৃতাই নয়, তৃণমূল চাইছে, যেখানে যেখানে রাজ্যপাল যাবেন, সেখানেই তাঁকে কেন্দ্রীয় বকেয়ার প্রশ্ন তুলে বিব্রত এবং কোণঠাসা করতে। যেখানেই যান, তাঁর কানের সামনে সব সময় বাজবে— কেন্দ্রকে বলুন টাকা দিতে! এখন দেখার, রাজ্যপাল কী ভাবে সেই সংগঠিত রাজনৈতিক আন্দোলনের মোকাবিলা করেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy