দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে উপনির্বাচনের দাবিতে স্মারকপত্র দিল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। নিজস্ব চিত্র।
সময়েই উপনির্বাচন হবে বলে আশাবাদী তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে রাজ্যে বকেয়া সাতটি বিধানসভার নির্বাচনের জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্রর কাছে দরবার করে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদল প্রায় আধ ঘন্টা কথা বলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। সাক্ষাতের পর তাঁরা জানান,সময়েই উপনির্বাচন হবে বলে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। সুদীপ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে আমরা আলোচনা করলাম। আলোচনার বিষয় ছিল রাজ্যের বকেয়া সাতটি নির্বাচন। যার মধ্যে ৫টি উপনির্বাচনের পর্যায়ে। প্রার্থীদের মৃত্যুতে দু’টি জায়গায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। সবগুলো একই তালিকাভুক্ত নয়।’’
কোভিড সংক্রমণের জন্য উপনির্বাচন করা যাচ্ছে না, এমন দাবির পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে সুদীপ বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের সময় বাংলায় কোভিডের হার ছিল শতকরা ৩৩ শতাংশ। সেটা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশের নীচে। আমরা তাঁদের বুঝিয়েছি যে রাজ্যের মানুষ চায় ছ’মাসের মধ্যেই উপনির্বাচন হোক। তার জন্য যদি প্রচারের সময় অল্প রাখা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তাতেও আমাদের বিশেষ আপত্তি নেই। আমরা ও বাংলার মানুষ চায় নির্দিষ্ট সময়ে উপনির্বাচন সম্পন্ন হোক।’’
কমিশনের জবাব পেয়েও যে তাঁরা আশ্বস্ত তা-ও জানিয়েছেন উত্তর কলকাতার এই প্রবীণ সাংসদ। তিনি বলেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনার আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এবং নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। উনিও নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা আশাবাদী মন নিয়েই যাচ্ছি। আমরা নিরাশ হয়ে ফিরছি না। পুরোপুরি সদর্থক না হলেও, আলোচনা আশাব্যঞ্জক হয়েছে।’’ সুদীপ আরও বলেন, ‘‘ওঁরা আরও জেলাভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করবেন। নিজের মতো করে পরীক্ষাও করছেন। উনি আমাদের কাগজপত্র দেখিয়েছেন। শুধুমাত্র আমাদের রাজ্য নয়, অন্য রাজ্যের কথাও তিনি বলেছেন। তাই বলা যায়, আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।’’
গত ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে তাঁকে উপনির্বাচনে জিতে সাংবিধানিক শর্তপূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রার্থী হতে পারেন ভবানীপুরে। তাই তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছেন, দ্রুতই রাজ্যে উপনির্বাচন হোক। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছেন, ‘‘আমরা ওদের বলেছিলাম, রাজ্যসভা তো বটেই। বিধানসভা ভোটের জন্যও আমরা তৈরি। উপনির্বাচন তো হবে একেকটা বিচ্ছিন্ন এলাকায়। তা ছাড়া গোটা রাজ্যেই কোভিড এখন অনেকটা কমে এসেছে।’’ মমতার আরও বক্তব্য, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী ভোটের ফল প্রকাশের ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করাতে হবে। ফলে আমরা বেআইনি বা অসাংবিধানিক কিছু চাইছি না। কিন্তু বিজেপি জানে, ওরা প্রতিটায় হারবে! তাই ওরা ভোট চাইছে না।’’ ভবানীপুর বিধানসভার কোভিড পরিস্থিতি নিয়েও তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ভবানীপুর নিয়ে কলকাতা পুরসভার একটা রিপোর্ট দেখছিলাম। অনেক ওয়ার্ডই এখন কোভিডশূন্য।’’
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের দু’টি রাজ্যসভার আসনও খালি রয়েছে। তবে সেই বিষয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই জানিয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা। বারসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘সদর্থক ভূমিকা নিয়েছেন কমিশনার। আলোচনা করে দেখছেন। সদর্থক পদক্ষেপ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আশা করছি, সংবিধানে যে ভাবে ছ’মাসের মধ্যে ভোট করার কথা বলা আছে, তা নির্দিষ্ট সময় হবে।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলের স্মারকলিপিতে গত এপ্রিল-মে মাসের কোভিড পরিস্থিতির সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে বিধানসভা ভোটের সময় ভোট করা যায়নি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জে। দিনহাটা ও শান্তিপুর আসনে জিতেও বিজেপি-র সাংসদ পদে থেকে যাওয়ায় পদত্যাগ করেছেন নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। ভবানীপুর আসন থেকে গত ২১ মে পদত্যাগ করেছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আর গণনার আগেই খড়দহ কেন্দ্রে বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ প্রয়াত হয়েছেন। তাই মোট ৭টি বিধানসভা আসনে ভোট বাকি পশ্চিমবঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy