আধার নিয়ামক সংস্থাকে চিঠি সাকেত গোখলের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আধার কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। প্রশাসনিক স্তরেও এই বিষয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। শনিবারই এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়া সংক্রান্ত বিতর্কে আধার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে তাদের চিঠি দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, দীর্ঘ দিন তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইন নিয়ে কাজ করা সাকেত গোখলে।
মঙ্গলবার আধার নিয়ামক সংস্থা ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)-র সিইও অমিত আগরওয়ালকে চিঠি দিয়েছেন সাকেত। চিঠিতে চার দফা প্রশ্ন রেখেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এই সাংসদ। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবার জানিয়েছিলেন, ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’র কারণেই রাজ্যের কিছু বাসিন্দার আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। এই প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য আধার কর্তৃপক্ষকে আর্জি জানিয়েছেন সাকেত।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার কতগুলি ঘটনা ঘটেছে, তা-ও জানতে চেয়েছেন সাকেত। তা ছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত কোন কোন রাজ্যে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সে নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। আধার কর্তৃপক্ষের কাছে সাকেতের চতুর্থ প্রশ্ন, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হলে কোন কোন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন নাগরিকেরা? বিষয়টিকে ‘জরুরি’ বলে অভিহিত করে সাকেতের আর্জি, চিঠি পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে জবাব দিক আধার কর্তৃপক্ষ।
আধার কার্ড বাতিল হওয়া নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষের কাছে চিঠি পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যে সমস্ত মানুষের কাছে এই চিঠি আসছে, তাঁদের অভিযোগ শোনার জন্য নতুন পোর্টালও শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁদের আধার বাতিল হয়েছে তাঁদের আলাদা কার্ড দেবে রাজ্য। ব্যাঙ্ক বা অন্য কাজে কারও সমস্যা হবে না।’’
আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারির পাশাপাশি কার্ড বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও চিঠি দেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতার অভিযোগ, আধার নিয়ামক সংস্থা বিধি না মেনেই অনেকের আধার বাতিল করছে। যাঁদের মধ্যে তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষ রয়েছেন। মানুষের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ানো এবং তাঁদের নানা পরিষেবা থেকে ‘বঞ্চিত’ করাই এর লক্ষ্য কি না, চিঠিতে তা-ও জানতে চান তিনি।
সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে আধার সমস্যার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। বৈঠকে শাহ আমাকে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।’’
সোমবার সকালে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই ঘটনায় আধারের রাঁচী আঞ্চলিক দফতরের ভুল হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি সব সমস্যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিটে যাবে বলেও দাবি করেন। তবে শান্তনু এত কম সময়ের কথা বলেননি। তিনি জানান, যাঁদের এমন সমস্যা হয়েছে, তাঁদের একটি ফর্ম পূরণ করে নতুন করে আধার সক্রিয় করার আবেদন করতে হবে।’’ শান্তনু আরও বলেন, ‘‘আমায় ফোনে বা ইমেল করে ফর্ম পাঠাতে হবে। এর পরে আমিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব আধার সক্রিয় করে দেব। গ্রাহকদের কাছে এই সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাবতীয় সঙ্কট কাটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেব আমি।’’ সাংবাদিক বৈঠকে একটি ফোন নম্বর ও ইমেল আইডিও সাধারণের জন্য দিয়েছেন শান্তনু। একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের যে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে এবং ফর্ম পূরণ করে পাঠালে, আমি দায়িত্ব নিয়ে আধার সক্রিয় করে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy