মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
আগামী ২ নভেম্বর লোকসভার এথিক্স কমিটিতে হাজিরা দেবেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার বিকেলে তা জানিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকরকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। তবে পাশাপাশিই সেই চিঠিতে কিছু ‘আক্রমণাত্মক’ বক্তব্যও পেশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ। মহুয়া চিঠিতে লিখেছেন, তিনি এথিক্স কমিটির ‘সম্মানার্থে’ ওই দিন সকাল ১১টায় হাজিরা দেবেন। কিন্তু সেই সঙ্গে তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
লোকসভার এথিক্স কমিটি সূত্রের খবর, চেয়ারম্যান সোনকরকে লেখা চিঠিতে মহুয়া জানিয়েছেন, এটা দেখে তিনি বিস্মিত হচ্ছেন যে, তাঁর অনুরোধ সত্ত্বেও কমিটি কার্যত তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে। তিনি সমনের সম্মানার্থে ওই দিন হাজিরা দেবেন। কিন্তু ওই ধরনের মনোভাবের তীব্র প্রতিবাদও জানিয়ে রাখছেন।
গত ২৬ অক্টোবর বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় দোহাদ্রাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এথিক্স কমিটি। এখন দেখার ২ নভেম্বর মহুয়াকে কী বলে কমিটি।
মহুয়া তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, লোকসভার এথিক্স কমিটি গত দু’বছর ধরে একটিও বৈঠক করেনি! কিন্তু এই ক্ষেত্রে কমিটি এত দ্রুততা দেখাচ্ছে। সেই ‘গতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি, কমিটিকে তার লক্ষ্মণরেখাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। কমিটি সূত্রের খবর, তিনি লিখেছেন, এথিক্স কমিটি কোনও ফৌজদারি বিষয়ে তদন্ত করতে পারে না। তার জন্য পৃথক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রয়েছে। মহুয়ার আরও অভিযোগ, সংসদে কেন্দ্রের শাসকদলের যে গরিষ্ঠতা রয়েছে, ক্রমাগত তার অপব্যবহার হচ্ছে। কমিটির ক্ষেত্রেও ঠারেঠোরে সেই অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ।
নিজের চিঠিতে মোট ৯টি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন মহুয়া। তার মধ্যেই রয়েছে যে, তিনি কমিটির সামনে তাঁর প্রাক্তন বান্ধব জয় দেহাদ্রাই এবং দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে প্রশ্ন করতে চান। মহুয়া লিখেছেন, তাঁর প্রাক্তন বান্ধব জয় কমিটির সামনে হাজির হয়ে যা বলেছেন, তাতে তিনি তাঁর সম্পর্কে করা কোনও অভিযোগের পক্ষে কোনও লিখিত বা মৌখিক তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি। নিজের মৌলিক অধিকার এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে মহুয়া তাঁকে প্রশ্ন (ক্রস এগজ়ামিন) করতে চান। তৃণমূল সাংসদ আরও লিখেছেন, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হলফনামা প্রদানকারী দর্শন হীরানন্দানিকেও প্রশ্ন করতে চান। কারণ, তিনিই হলেন সেই তথাকথিত ঘুষ প্রদানকারী ব্যক্তি। কমিটির চেয়ারম্যান সোনকরকে লেখা চিঠিতে তার পরেই মহুয়া লিখেছেন, তাঁর অনুরোধ, তাঁকে ওই দু’জনকে প্রশ্ন করতে দেওয়া হবে কি হবে না, তা যেন কমিটি লিখিত ভাবে তাঁকে জানায়। ওই দু’জনকে তাঁকে প্রশ্ন করতে না দিলে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াই ‘অসমাপ্ত এবং অন্যায়’ বলে প্রমাণিত হবে।
মহুয়া আরও লিখেছেন, ওই কমিটি তৈরি হওয়ার সময় লোকসভার সদস্যদের জন্য একটি ‘আদর্শ আচরণবিধি’ তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। এ-ও বলা হয়েছিল যে, সময়ে সময়ে ওই আচরণবিধির পরিবর্ধন এবং পরিমার্জন করা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা হয়নি। সেই সূত্রেই মহুয়ার আবেদন, আদর্শ আচরণবিধি না থাকায় তিনি আশা করেন, প্রতিটি ঘটনা যেন ঠিকঠাক উদ্দেশ্য নিয়ে দেখা হয়। কোনও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব যেন না দেখানো হয়।
‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগে লোকসভার সাংসদ মহুয়াকে প্রথমে ৩১ অক্টোবর, মঙ্গলবার তলব করেছিল এথিক্স কমিটি। কিন্তু মহুয়া জানিয়েছিলেন, ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর সংসদীয় এলাকায় বিজয়া দশমীর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। ৫ নভেম্বরের পর তিনি যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে কমিটির সামনে হাজিরা দিতে পারেন। তার পরে ফের কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ সোনকর চিঠি লিখে মহুয়াকে ২ নভেম্বর ডেকে পাঠান। মঙ্গলবারের চিঠিতে মহুয়া কমিটির চেয়ারম্যানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সংসদের কক্ষে দাঁড়িয়ে বিজেপি সাংসদ রমেশ বিদুরি ঘৃণাভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি। সেই বিদুরিকে ১০ অক্টোবর হাজিরা দিতে বলেছিল সংসদের স্বাধিকারভঙ্গ কমিটি। কিন্তু তিনি মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, রাজস্থানে প্রচারের কাজে রয়েছেন। তার পর থেকে তাঁকে আর ডাকেনি কমিটি। বিদুরির ক্ষেত্রে যে সংসদের একটি কমিটি আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল, তাঁর ক্ষেত্রে সংসদেরই অন্য একটি কমিটি কেন ‘অন্য রকম’ পন্থা নিচ্ছে!
প্রসঙ্গত, তৃণমূল দলগত ভাবে এই বিতর্কে মহুয়ার পাশে দাঁড়ায়নি। বলা হয়েছে, তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই দল যা বলার বলবে। কিন্তু মহুয়াকে ডাকার বিষয়ে এথিক্স কমিটির ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও ‘তাড়াহুড়ো’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলাতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও।
এর আগে মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয়ের একটি চিঠির ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত অভিযোগ করেন, শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে সংসদে প্রশ্ন করার জন্য শিল্পপতি হীরানন্দানির কাছ থেকে নগদ টাকা এবং দামি উপহার নিয়েছেন মহুয়া। এ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছিলেন নিশিকান্ত। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সংসদের ওয়েবসাইটে লগ ইন করার জন্য নিজের কোড এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছেন মহুয়া। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন। সেই অভিযোগ জানিয়েই সিবিআই প্রধানকে চিঠি লিখেছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয়। তিনি একটি তালিকা দিয়ে দাবি করেন, মহুয়া ওই সমস্ত মহার্ঘ জিনিস নিয়েছিলেন হীরানন্দানির থেকে। এর মধ্যে হীরানন্দানির একটি হলফনামাও প্রকাশ্যে আসে। যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন, মহুয়াকে তিনি নানা সময়ে নানা জিনিস দিয়েছেন। এবং মহুয়ার সংসদের আইডি ব্যবহার করে প্রশ্ন লিখে দিয়েছেন। মহুয়া এর মধ্যে জানিয়েছেন যে, তিনি প্রশ্ন করার পোর্টালের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy