Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

চিরনিদ্রায় অবনীমোহন

শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করে প্রশাসনিক পদ, তার পর সোজা রাজনীতির ময়দানে। বাঁধা ছকের বাইরে থেকেই রাজনীতিতে জায়গা করেছিলেন অবনীমোহন জোয়ারদার। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের এই দু’বারের বিধায়ক শুক্রবার ভোর রাতে তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে চিরনিদ্রায় চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে কৃষ্ণনগরে দলীয় কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

অবনীমোহন জোয়ারদারকে দলীয় পতাকায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। শুক্রবার, কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

অবনীমোহন জোয়ারদারকে দলীয় পতাকায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। শুক্রবার, কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করে প্রশাসনিক পদ, তার পর সোজা রাজনীতির ময়দানে। বাঁধা ছকের বাইরে থেকেই রাজনীতিতে জায়গা করেছিলেন অবনীমোহন জোয়ারদার। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের এই দু’বারের বিধায়ক শুক্রবার ভোর রাতে তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে চিরনিদ্রায় চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে কৃষ্ণনগরে দলীয় কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

কর্মজীবন থেকে অবসরের প্রায় পাঁচ বছর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ২০০৯ সালে রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন এক সময় পুলিশ অফিসার থাকা অবনীমোহন। ডিআইজি হিসাবে ব্যারাকপুরের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর বাড়িতেই বসেছিলেন। আচমকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন তাঁর জীবনে নতুন মোড় নিয়ে আসে। তাঁকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি রাজি হননি। বরং বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতেই বেশি উৎসাহী ছিলেন।

২০১০ সালে নদিয়া জেলার পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব, তারপর ২০১১ সালে তাঁকে আবারও প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অবনীবাবু তাঁর জন্মস্থান তেহট্ট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রাকাশ করেন। কিন্তু নেত্রী তাঁকে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করোন। ভূমিপুত্র ৩৫ হাজার ভোটে জয়ী হলেন। রাজনীতি থাকবে আর রাজনৈতিক জটিলতা থাকবে না, তা তো হয় না। বিভিন্ন কারণে নদিয়ার আরেক বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। বিবাদ অনেক সময়ই প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। অবনীবাবু বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে।

২০১৬ সালে অবনীবাবুকে সরিয়ে এই কেন্দ্র থেকে টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করেন কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেত্রী অবনীবাবুর উপরেই ভরসা রাখেন। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তিনি আবার প্রার্থী হলেন কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকেই। এ বার সরাসরি তাঁর বিরোধিতায় নামেন অসীমবাবু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরেরা। কিন্তু সে বারও তিনি প্রায় ১৩ হাজার ভোটে জয়ী হলেন।

রাইটার্স অভিযানের দিন কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল হিসাবে কর্মরত অবনীবাবু যাঁকে টেনে বের করে এনেছিলেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁকে মন্ত্রীত্ব দেন। কারামন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু শপথ গ্রহণের দিনই বিধানসভা কেন্দ্রে পড়ে যান। সেলিব্রাল অ্যাটাক। অস্ত্রোপচারেও পুরোপুরি সুস্থ হলেন না। সেই অবস্থাতেই মন্ত্রীত্ব সামলাতে থাকেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে কারামন্ত্রী থেকে সরিয়ে তাঁকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন মুখ্যমন্ত্রী।

২০১৮ সালে আবার সেরিব্রাল অ্যাটাক। হাসপাতাল থেকে ফিরে কার্যত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। কৃষ্ণনগরের সঙ্গে যোগাযোগ কমে আসে। তবে কৃষ্ণনগরের দলীয় রাজনীতিতে তিনি একই রকম প্রাসঙ্গিক রয়ে গেলেন। বড় ছেলে অমিতাভ ওরফে তাপসের মাধ্যমে কৃষ্ণনগরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এরই মধ্যে তাপসবাবুর মধ্যস্থতায় গৌরীশঙ্করবাবু ও অবনীবাবু কাছাকাছি আসেন। কিন্তু অসীম সাহার সঙ্গে একই দূরত্ব রয়ে যায়। এই লড়াইয়ের মধ্যেই পিকের পক্ষ থেকে ‘দিদিকে বল’ কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব কিন্তু দেওয়া হয় অবনীবাবুর ছেলে তাপসকে।

তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সেটা হল, এ বার কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের রাজনৈতিক সমীকরণ কী হবে? কারণ, অবনীবাবু তো গৌরীশঙ্কর দত্ত বা শঙ্কর সিংহ নন। তাঁর নিজস্ব অনুগামীদল সেই অর্থে নেই। তাঁর বড় ছেলে তাপস কি শেষপর্যন্ত কৃষ্ণনগরে অবনীবাবুর রাজনৈতিক উত্তরাধীকার বহন করবেন? সময় সেই উত্তর দেবে।

অন্য বিষয়গুলি:

MLA death TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy