ছবি: পিটিআই।
রাজ্যপাল থেকে ‘রাজনীতিপাল’ হয়ে উঠবেন না— রাজ্যসভায় আজ একই সঙ্গে মোদী সরকার ও জগদীপ ধনখড়কে এই বার্তা দিল তৃণমূল। দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় নাম না করে রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, ‘‘রাজনীতি করার হলে রাজনীতি করুন। কিন্তু রাজভবন ছেড়ে করুন।’’
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূল যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হবে, তা আগেই জানিয়েছিলেন দলের নেতারা। বিজেপি-ও প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তৃণমূল যাতে সংসদে বিষয়টি তুলতে না পারে। কিন্তু আজ অধিবেশনের প্রথম দিনেই সুকৌশলে সেই কাজটি সেরে ফেলেছেন সুখেন্দুশেখর। রাজ্যসভার ২৫০তম অধিবেশনে রাজ্যসভার ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে যা হচ্ছে, রাজ্যপাল মহাশয় যখন যা খুশি বলছেন। প্রতিদিনই উল্টোপাল্টা কথা বলছেন।’’
‘রাজনীতিতে রাজ্যসভার ভূমিকা ও সংস্কারের প্রয়োজন’ বিষয়ে বলতে উঠে সুখেন্দুবাবু যে এ ভাবে রাজ্যপালকে নিশানা করবেন, তা মোদী সরকারের মন্ত্রী-সাংসদরাও বুঝতে পারেননি। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টায় বলেন, ‘‘আপনি জানেন, এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তাব আনতে হয়।’’
আরও পড়ুন: আমি সমান্তরাল প্রশাসন চালালে তো আমারও কাট-আউট থাকত: ধনখড়
সুখেন্দুশেখর তার জবাবে বলেন, ‘‘আমি তো নিয়মের বিষয়েই কথা বলছি। প্রস্তাব না এনে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। কিন্তু রাজ্যপালের দফতর নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ এখন যাঁদের রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হচ্ছে, মানুষ তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট বলছেন। আমি অবশ্য এর সঙ্গে একমত নই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, এটাই সাধারণ মানুষের মত। অনেক রাজ্যেই রাজ্যপালের ভূমিকা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও মানুষের স্বার্থের বিরোধী। সাংবিধানিক নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজ্যপালকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’ এর পরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েন তিনি।
রাজ্যসভার পরে লোকসভাতেও রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে যাতে সরব হওয়া যায়, তার জন্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে দাবি তোলেন, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় বরাদ্দ হোক। সূত্রের খবর, বিজেপির জগদম্বিকা পাল তাতে প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে একটি রাজ্যের রাজ্যপালের বিষয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে? সুদীপ যুক্তি দেন, তাঁরা সামগ্রিক ভাবে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চাইছেন।
সংসদে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আজ শিলিগুড়িতে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এক জন সম্মাননীয় সাংসদ সংসদে কী বলছেন, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। মুখ্যমন্ত্রীও তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। উনি কিছু যদি বাইরে বলে থাকেন, তা হলে তা ওঁদের বিষয়। আমাকে তো সরাসরি কিছু কেউ বলেননি।’’ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার এমন কিছু জানা নেই। আমাকে কিছু জানানোও হয়নি। সংবাদপত্রে পড়েছি। যাঁরা বলেছেন, তাঁদের গিয়ে প্রশ্ন করুন, কারণ জিজ্ঞাসা করুন।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যপাল সারা রাজ্যে ঘুরছেন। রাজ্যের অব্যবস্থার কথা জেনে তিনি কেন্দ্রকে জানাবেন বলে তৃণমূলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে কারণেই তৃণমূল সরব হচ্ছে।’’ আর এ রাজ্যের বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল রাজ্যের ক্যাপ্টেন। তাঁর মাধ্যমে রাজ্য সরকার বিভিন্ন সরকারি নির্দেশ কার্যকর করে। অথচ তৃণমূল সরকার প্রতিনিয়ত রাজ্যপালের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে সংবিধান বিরোধী কাজ করে চলেছে।’’ একই সুরে রাজ্যপালেরও অভিযোগ, ‘‘সংবিধান অনুসারে আমি কেন্দ্রের এজেন্ট। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সেতুবন্ধন করাটা আমার কাজ। কিন্তু রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিষয়গুলি আমাকে জানানো হচ্ছে না। বুলবুল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খুব ভাল কাজ করছেন। বুলবুল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আবহাওয়াবিদদের জন্য কত জীবন বেঁচেছে। অথচ সরকার আমাকে কিছুই জানাতে সময় পায়নি। হয়তো আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে জানাবে।’’
এ দিকে, রাজ্যপাল-নবান্ন দ্বৈরথে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। ঠিক হয়, দলের কেউ কোনও বিতর্কসভায় এ নিয়ে কোনও অভিমত দেবেন না। যা বলার রাজ্য সভাপতিই বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy