কাঁথিতে সেই ব্যানার। নিজস্ব চিত্র
ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে শুভেন্দু-পর্ব। এ বার খাস ‘অধিকারী গড়’ কাঁথিতে ব্যানার পড়ল ‘দাদার অনুগামী’দের।উজ্জ্বল আকাশে এক ঝাঁক সাদা পায়রার মাঝে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দেওয়া ওই ব্যানার রবিবার সন্ধে থেকে মেচেদা বাইপাস, চৌরঙ্গী মোড়-সহ কাঁথি শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়। সবেতেই বয়ান— ‘দাদার সাথে ছিলাম। আছি। থাকব।’ ‘অঙ্গীকার’ শিরোনামে ব্যানারের নীচের সাদা অংশে সোমবার সকাল থেকে অনেকে সইও করে যাচ্ছেন।
এই আবহে সোমবারই মেদিনীপুর শহরে মানস ভুঁইয়া, অজিত মাইতির মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব বার্তা দিয়েছেন, ‘হঠাৎ একটা উইকেট পড়তেই পারে। কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। নার্ভাস হলে চলবে না।’ শুভেন্দুর নাম না করেই তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, মানুষের ‘সেবক’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া অন্য কেউ নন। আর চাইলেও কেউ তৃণমূলের কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না। কোনও ‘দাদা’ নন, তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হবেন ‘দিদি’-ই।
দু’দিন আগেই নন্দীগ্রাম ও মেদিনীপুর শহরের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে শুভেন্দু নিজেই ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তার পর তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান ও দলত্যাগ নিয়ে জোরদার হয়েছে জল্পনা। জেলায় জেলায় ‘দাদার অনুগামী’দের ব্যানারে নানা কর্মসূচিও চলছে। তবে শুভেন্দুর সঙ্গে থাকার বার্তা দিয়ে এমন ব্যানার ও সেই অঙ্গীকারে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোগ আগে দেখা যায়নি। এই প্রক্রিয়া অধিকারীদের খাসতালুক কাঁথি থেকে শুরু হওয়ায় বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু ঠিক কারা এই ব্যানার দিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। ব্যানারে কারও নামও নেই। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ, পূর্ব মেদিনীপুরে দলের জেলা সভাপতি তথা শুভেন্দুর পিতা শিশির অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কারা এই ধরনের ব্যানার দিয়েছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ দলের নতুন যে জেলা কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতেও তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: দলের পরে সামাজিক বৈঠক করবেন শাহ
আরও পড়ুন: কংগ্রেস কী চাইছে, ধন্দ বাম শিবিরে
এ দিন মেদিনীপুরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে শুভেন্দুর নাম অনুচ্চারিত থাকলেও দলের জেলা নেতাদের বক্তব্য জুড়ে পরোক্ষে ছিলেন তিনিই। সাংসদ মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে আবেগের কোনও জায়গা নেই। রাজনীতিটা ফুটবল খেলা নয়, ক্রিকেট খেলা। হঠাৎ করে একটা উইকেট পড়ে যেতেই পারে। কিন্তু নার্ভাস হলে হবে না। যে ব্যাটসম্যান কঠিন ভাবে ব্যাটটা ধরে ঘুরিয়ে চার-ছয় মারতে পারবেন, খেলাটা তিনিই ঘুরিয়ে দেবেন।’’
শুভেন্দুর নাম না নিয়েই মানসের সংযোজন, ‘‘আমি নিজেকে ভাবতে পারি স্বর্গের ইন্দ্ররাজার বরপুত্র, শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিষ্ণু ফেল করেছিলেন। মহাদেব মহেশ্বর ফেল করেছিলেন। ব্রহ্মা ফেল করেছিলেন। মা মহামায়া পেরেছিলেন। আজকের যুগে মহামায়ার প্রতিরূপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।’’ দীনেন রায়, প্রদ্যোত ঘোষের মতো জেলার বিধায়কদেরও বলতে শোনা যায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, তৃণমূল একটা পরিবার।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি কর্মীদের বার্তা দেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূলের পবিত্র পতাকা ছাড়া জেলার উন্নয়ন আর কেউ সূচিত করতে পারবেন না। কেউ তৃণমূলকে ভাঙতে পারবেন না।’’ দলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘দলের ভিতরের আলোড়ন মোকাবিলা করতে হবে। মানুষের সেবক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্য কেউ নন।’’ এ দিন খড়্গপুরে দলীয় কর্মসূচিতে ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি অবশ্য এ দিনও বলেন, ‘‘শুভেন্দু অন্য দলের নেতা, মন্ত্রী। তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে আমার কাছে কোনও খবর নেই।’’ তবে বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলে বড় ভাঙন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy