সত্যাগ্রহ মঞ্চে পার্থ ভৌমিক। —নিজস্ব চিত্র।
জোর করে দলবদল করাচ্ছে বিজেপি। এই অভিযোগ তুলে নৈহাটিতে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছে তৃণমূল। সেই ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচিতে থাকার কথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি পৌঁছনোর আগেই ওই সত্যাগ্রহ মঞ্চে পৌঁছে যান তৃণমূলের একাধিক নেতা। আর সেই মঞ্চ থেকেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষমা চাইতে শোনা গেল নৈহাটির বিধায়ক তথা জেলার দাপুটে নেতা পার্থ ভৌমিককে। দলের জন্মলগ্নের সময়কার তৃণমূল কর্মীদের মূল্যায়ন যে দলীয় নেতারা করতে পারেননি, পার্থ এ দিন সে কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ ক্ষমা চাইছি।’’
লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে একটা অংশের মতে উঠে আসছিল, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা। উঠে আসছিল, আদি এবং নব্য তৃণমূল কর্মীদের সম্পর্কের কথা। সেই সূত্রেই পার্থর এ দিনের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নৈহাটি পুরসভার সামনে মঞ্চ তৈরি করে চলছে এই ‘সত্যাগ্রহ’। তাতে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপির সন্ত্রাসে যাঁরা ঘরছাড়া, তাঁদের ফেরাতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ।মুখ্যমন্ত্রী এসে পৌঁছনোর আগে সেখানে দলীয় সমর্থকদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন নৈহাটির বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি পার্থ ভৌমিক। তাঁর আগে অনেকেই ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ভাষণ দিতে ওঠার আগে উপস্থিত জনতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্লোগান দিচ্ছিল। সেই আবহেই বলতে ওঠেন পার্থ।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘এখানে তাঁরাই আজ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, যাঁরা ১৯৯৮ সালে আমার সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন।’’ তার পরেই পার্থকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আজ ক্ষমা চাইছি। আপনাদের মতো অনেককে আমাদের দলের নেতারা মনে রাখতে পারেননি। অনেককেই আমাদের দলের নেতারা মূল্যান করতে পারেননি।’’ এই সময় পার্থের গলা প্রায় বুজে আসে। তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমি কিন্তু কখনও সম্পর্ক ছিন্ন করিনি।’’ এর পরেই তাঁর নিদান, ‘‘বিজেপি যদি ভয় দেখায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে গুন্ডামি করে, আমাকে ফোন করবেন। ভয় পাবেন না। যদি আপনাকে দুটো চড় মারে, তা হলে একটা চড় আমি গিয়ে খেয়ে আসব।’’
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের নোটিস খারিজ করা হোক, রাজীবকে মামলার অনুমতি হাইকোর্টের, শুনানি আজ
দুপুর ১টা নাগাদ পৌঁছনোর কথা থাকলেও মমতা ঢোকেন বিকাল পাঁচটা নাগাদ। তিনি আসার আগে তৃণমূল কর্মী, সমর্থক এবং রাজ্য ও জেলাস্তরের নেতাদের নেতৃত্বে অবস্থান চলে। সেখানে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী, পানিহাটির বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, নোয়াপাড়ার সুনীল সিংহ, প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র-সহ আরও অনেকে। মদন মিত্র এ দিন ব্যারাকপুরের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ অর্জুন সিংহকে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেন, ‘‘যদি বদলা নিতে না পারি, বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ করব। কিন্তু, দাঙ্গাবাজদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না।’’
নৈহাটি পুরসভার সামনে যে তৃণমূল সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ব্যারাকপুরে জেতার পর থেকে স্থানীয় মানুষকে ভয় দেখিয়ে বেড়াচ্ছে বিজেপি। বোমা-বন্দুক দেখিয়ে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে দলবদল করতে বাধ্য করছে। নির্বাচন পরবর্তী বিজেপির এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy