Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘অডিটর’ নেতাদের দাপট কাল হল দলের 

কোন রোষে লোকসভায় নিজের গড়েও ভোট হারাল তৃণমূল? কাটমানি-ক্ষোভও অব্যাহত। জেলায় জেলায় অন্বেষণএক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘সরকার থেকে হাজার দেড়েক টাকার মতো ভাতা পান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। সেই টাকায় কিছুই হয় না। অথচ পঞ্চায়েতের নানা কাজে তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ব্লক অফিসে ছুটতে হয়।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ফিরোজ ইসলাম
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৪:৫২
Share: Save:

দুপুরের মধ্যে বাঁকুড়া শহর থেকে বিধানসভা পৌঁছনোর তোড়জোড় করছিলেন শাসক দলের এক দাপুটে বিধায়ক। ইদানীং তাঁর ক্ষমতা কাটছাঁট করা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ নেই।

নাম না লেখার শর্তেই কাটমানি প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হলেন বিধায়ক। প্রথমেই রাজনৈতিক ভাবে কাটমানি নিয়ে অশান্তির জন্য ‘বিজেপি আশ্রিত বামেদের’ দুষলেও ‘উটকো’ বিক্ষোভ নিয়ে দুশ্চিন্তা গোপন করতে পারলেন না। জানালেন, লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে বিরোধী শিবির চাঙ্গা। তার উপরে কাটমানি নিয়ে জনসমক্ষে বিক্ষোভের মুখে পড়ে নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা চলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। থানা, পুলিশ, পঞ্চায়েত, পুরসভা কেউই সে ভাবে তখন পাশে থাকছে না। মেদিনীপুরের কাউন্সিলরের মতো তাঁরও অভিযোগ, নেত্রী নিজে কাটমানি নিয়ে মুখ খোলায় বিরোধী শিবির সুযোগ লুফে নিয়েছে। যত্রতত্র জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়ার মতোই শাসক দলের নেতাদের বিদ্রুপ করার নয়া হাতিয়ার হয়ে ঘুরছে কাটমানি বিতর্ক। বিধায়কের কথায়, ‘‘দলের মিটিং মিছিল-সহ নানাখরচ চালানোর জন্য টাকা তুলতে হয়। তার জন্য কাটমানি-অভিযোগের মুখে পড়তে হলে নিচু তলায় আর কেউ কোনও দায়িত্ব নিতে চাইবেন না।’’

কী বলে সেই নিচু তলা? রানিবাঁধের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘সরকার থেকে হাজার দেড়েক টাকার মতো ভাতা পান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। সেই টাকায় কিছুই হয় না। অথচ পঞ্চায়েতের নানা কাজে তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ব্লক অফিসে ছুটতে হয়। পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে চাইলেও আর দিনমজুরির পেশায় ফিরতে পারেন না অনেকে। তখন কারও কাজ করে দিলে টাকার জন্য হাত পাতা ছাড়া উপায় থাকে না।’’

ভাতার ব্যবস্থা তো হয়েছে পরে। তার আগেও পঞ্চায়েতে কি এ ভাবেই চলত সব কিছু? সদুত্তর দিতে পারেননি ওই নেতা। জঙ্গলমহলে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প ছাড়াও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেননি তিনি। আবার বাড়তি আয়ের টানে দলের নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ঢালাও ঠিকাদারি করছেন বলেও স্বীকার করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দলে উন্নয়নের সুবিধাভোগী অংশ তৈরি হয়েছে।’’

বাঁকুড়া শহরের এক তৃণমূল নেতার আবার অভিযোগ, দলীয় সংগঠনে টাকা তোলা এবং টাকার ভাগ ‘ঠিক জায়গায়’ পৌঁছে দিতে পারা নেতাদের কদর আলাদা। মাটি কামড়ে পড়ে থাকা নেতাদের চেয়েও ‘অডিটর’ নেতাদের দাপট বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘দলীয় সংগঠনে গত কয়েক বছরে অডিটর নেতাদের সমান্তরাল আধিপত্য কায়েম হয়েছে। মানুষের সবচেয়ে বেশি রাগ এঁদের উপরেই।’’ অডিটর কারা ? ‘‘ বাইরে থেকে এসে যাঁরা শুধু হিসেব বুঝে নিয়ে যান।’’

বাঁকুড়ায় কাটমানি বিক্ষোভ হয়েছে সোনামুখী, পাত্রসায়র, তালড্যাংরা এবং বাঁকুড়া ২ ব্লকে। বাঁকুড়া থেকে খাতড়া যাওয়ার পথে কালীতলা বাজারে চায়ের দোকানে বসে কথা হচ্ছিল শংকর সিংহ সর্দারের সঙ্গে। পেশায় ছোট ব্যবসায়ী শংকরের কথায়, ‘‘তৃণমূলে কাটমানি নতুন নয়। তবে, যেখানে বিরোধীদের শক্তি বেড়েছে, সেখানেই কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভ বাড়ছে।’’ বাঁকুড়া রেলস্টেশনে বসে সোনামুখীর যুবক বিপ্লব পাত্র আবার বললেন, ‘‘ভোটের পরে কাটমানি নিয়ে তৃণমূল কোণঠাসা। চাপ বাড়াতে কেউ ছাড়ছে না। ন্যায্য-অন্যায্য সব রকম অভিযোগই বিরোধীরা তুলছেন।’’

আর বিরোধীরা কী বলছেন? বিজেপি’র বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র অবশ্য বললেন, কাটমানি বিক্ষোভে তাঁদের হাত নেই। তবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ প্রকাশে তাঁরা সবসময় পাশে আছেন। সিপিএম নেতা অমিয় পাত্রের সরাসরি অভিযোগ, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় শাসক দল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ‘সীমাহীন দুর্নীতি’ করেছে। সাধারণ মানুষ উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও পাননি। তাই এই ক্ষোভ।

অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলার সভাপতি শ্যামল সাঁতরার পাল্টা দাবি, বামকর্মীদের একাংশের মদতেই রামের বাড়বাড়ন্ত। তবে মানুষ ‘নৈরাজ্য’ বেশিদিন মেনে নেবেন না। ভোট- বিপর্যয়ের পর দায়িত্ব পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বুথ স্তর পর্যন্ত কর্মীদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন শ্যামল। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের অভাব-অভিযোগ শোনার জায়গা তৈরি হওয়ায় বোঝাপড়াও বাড়ছে।’’ সব মিলিয়ে মল্লভূমে গেরুয়া ঝড় স্থায়ী হবে না, এই তাঁর দাবি। আশাও বটে।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Bankura Cut Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy