Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali Incident

পদ মিলতেই সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার ‘বাড়িতে হামলা’! অজিতদের বিরুদ্ধে জনরোষের ফল, দাবি স্ত্রীর

বেড়মজুরের শাসক নেতা হলধর আড়ির বাড়ি সংলগ্ন খড়ের গাদায় আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। পরিবারের দাবি, অজিত মাইতিদের বিরুদ্ধে জনরোষের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।

তৃণমূল নেতার বাাড়িতে হামলার অভিযোগ।

তৃণমূল নেতার বাাড়িতে হামলার অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২৩
Share: Save:

রবিবারই তাঁকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছিল শাসকদল। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার ‘বাড়িতে হামলা’র অভিযোগ উঠল। বেড়মজুরের শাসক নেতা হলধর আড়ির বাড়ি সংলগ্ন খড়ের গাদায় আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল নেতার পরিবারের দাবি, অজিত মাইতিদের বিরুদ্ধে জনরোষের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।

সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা অজিতকে ঘিরে নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক রবিবার জানিয়েছিলেন, অজিতকে যে এলাকা দেখভাল করতে বলা হয়েছিল, সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হলধর ও শক্তিপদ রাউতকে। তাঁদের যুগ্ম কনভেনর করা হয়েছে। তার পরেই সোমবার হলধরের ‘বাড়িতে হামলা’র অভিযোগ উঠল। হলধরের স্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামীকে জোর করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অজিতদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের জেরেই তাঁদের উপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। গ্রামবাসীদের একাংশের অবশ্য দাবি, নজর ঘোরাতেই নিজে খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়েছেন তৃণমূল নেতা।

রবিবার সকালে বেড়মজুরে একটি হরিনাম সংকীর্তনের আসরে গিয়েছিলেন পার্থ এবং রাজ্যের আর এক মন্ত্রী সুজিত বসু। বেলা গড়াতে সেই এলাকাতেই গ্রামবাসীদের তাড়া খান অজিত। প্রাণ বাঁচাতে তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঢুকেই দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। এ দিকে ওই বাড়ির লোক তখন বাইরে স্নান করছিলেন। স্নান সেরে ঘরে ঢুকতে গিয়ে তিনি দেখেন, দরজায় তালা! ওই ব্যক্তির দাবি, নিমন্ত্রণ আছে বলে সকাল সকাল স্নান সেরে পোশাক পরতে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখেন দরজায় তালা!

বাইরে মারমুখী জনতার ভিড়। প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচি। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকেরাও। এই পরিস্থিতিতে গণপিটুনির ভয়ে কেঁদেই ফেললেন সন্দেশখালির বেড়মজুরের তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি! ভিতর থেকে তাঁর আর্তি, ‘‘দাদা, দরজা খুলবেন না! ওরা আমাকে মেরে ফেলবে!’’

অন্যের বাড়িতে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে নিজেকে বন্দি রেখেছিলেন অজিত। পুলিশ আধিকারিকেরা বার বার আশ্বাস দিলেও তিনি বাইরে বেরোতে রাজি ছিলেন না। যদিও মুখে বার বার বলছিলেন যে, পুলিশের প্রশাসনের উপর তাঁর ভরসা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বেরোনোর সাহস পাচ্ছিলেন না তৃণমূল নেতা।

কোলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে দেখা গিয়েছিল, ঘরে বসে রীতিমতো কাঁপছেন অজিত। বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কাউকে ফোন করার। কিন্তু কোনও কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অজিতের বিরুদ্ধে যখন ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে বেড়মজুর, তখন সন্দেশখালির অন্য একটি জায়গা থেকে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানিয়ে দেন, দল তাঁর পাশে নেই। তাঁর পদও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘অন্যায় করলে তো রাগের বহিঃপ্রকাশ হবেই।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভের আঁচ একটু কমে। বিক্ষোভকারীরা একটু একটু করে সরতেই শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা। এর পরেই পরিস্থিতি বুঝে অজিতকে বুঝিয়ে বার করেন পুলিশ আধিকারিকেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, অজিতকে আপাতত আটক করা হয়েছে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মিনাখাঁ থানায়। সোমবার সকালে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, গ্রামের অনেকের জমি দখল করেছেন অজিত। শাহজাহান শেখের এই অনুগামী এক সময়ে বিভিন্ন লোককে চমকে-ধমকে বেড়িয়েছেন। তাঁদের উপর অত্যাচার করেছেন। তাই এই বিক্ষোভ। গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে অজিতের নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী পার্থ বলেন, ‘‘যাদের দলের নেতা বলা হচ্ছে, তারা অত্যাচার করেছে বলেই তো মানুষ বিক্ষোভ করছে। যারা অত্যাচার করেছে, তাদের পাশে দল নেই।’’ মন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, অন্যায় করলে প্রশাসন তো ব্যবস্থা নেবেই। দলও নিজের মতো পদক্ষেপ করবে। তাঁর কথায়, ‘‘যাদের নামে অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে, পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে। আমরা দল থেকে সরিয়ে দিয়েছি। অজিত মাইতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, আমরা সরিয়ে দিয়েছি। ওখানে হলধরদা আর শক্তিদা দু’জনকে জয়েন্ট কনভেনর করা হয়েছে। অন্যায় করলে তো রাগের বহিঃপ্রকাশ হবেই।’’ মন্ত্রী পার্থের বার্তা, ‘‘কোনও অভিযোগ থাকলে প্রশাসনকে জানান। হাতে কেউ আইন তুলে নেবেন না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy