ধৃত বিষ্ণুপদ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
বাতিল নোট বদলের পরিকল্পনা করে জাতীয় সড়কে টাকা লুঠের উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল দু’পক্ষ। কিন্তু নোট বদল হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল দু’পক্ষই। তাদের মধ্যে এক জন মুর্শিদাবাদের এক তৃণমূল নেতা।
বুধবার রাতে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বিষ্ণুপদ সরকার নামে বছর বাহান্নর ওই তৃণমূল নেতা-সহ ছ’জনকে ধরে তমলুক থানার পুলিশ। বিষ্ণুপদ বর্তমানে দলের কোনও পদে না থাকলেও এক সময়ে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ব্লক সভাপতি ছিলেন। তিনি জলঙ্গির সীমান্তবর্তী নরসিংহপুরের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় তোলাবাজি এবং পাচারের অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষ এবং দলেরই একাংশের। তবে, সেই অভিযোগ কখনও থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়নি।
মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘বিষ্ণুপদ নামে কেউ আমাদের দলের ব্লক সভাপতি ছিলেন না।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘এক সময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের সঙ্গে ওঁর ওঠাবসা ছিল। সেই সুযোগে এলাকার অনেকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছেন বিষ্ণু। ওঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ রয়েছে যে আমরা যোগাযোগ রাখি না।’’ বিষ্ণুপদবাবুর দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘’তমলুকের দু’জন মোটা অঙ্কের বাতিল নোট বদল করতে চায় জানতে পেরে তার বদলে নতুন টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিল বিষ্ণুপদ-সহ তাঁর সঙ্গীরা। দু’পক্ষই পরস্পরের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লুঠের পরিকল্পনা করেছিল। তবে, কোন পক্ষের কাছ থেকেই টাকা
পাওয়া যায়নি।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে তমলুক থানার রামতারক হাটের কাছে বাড়হরশঙ্কর গ্রামের শিবতলা এলাকায় একটি গাড়ি নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন বিষ্ণুপদরা। ধৃত বাকি পাঁচ জন হল— তমলুকের গড়কিল্লার দেবেন্দ্রনাথ মান্না, বাহিরআগাড় গ্রামের প্রণবেশ জানা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির কর্ণগড় এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় মল্লিক, হাওড়ার ধর্মশালা এলাকার সঞ্জীবকুমার বাদল এবং শিবপুরের গণেশ বিশ্বকর্মা। সঞ্জয়ের শ্বশুরবাড়ি তমলুকের রামতারক এলাকায়। তাঁর সঙ্গে সেখানকার মাছ ব্যবসায়ী প্রণবেশের পরিচয় ছিল। ব্যবসা সূত্রে সঞ্জয়ের সঙ্গে সঞ্জীবের সম্পর্ক ছিল। এক ব্যবসায়ীর ১৫ কোটি টাকার বাতিল নোট বদল করার কথা সঞ্জীবকে জানায় সঞ্জয় । সঞ্জীব প্রতিশ্রুতি দেয়, ওই ১৫ কোটির বিনিময়ে তারা ১০ কোটি টাকার নতুন নোট দেবে। সেই পরিকল্পনা মতো এ দিন দেবেন্দ্রনাথ এবং প্রণবেশ জাতীয় সড়কের ধারে অপেক্ষা করছিল। পরে গাড়িতে বিষ্ণুপদ তিন জনকে নিয়ে হাজির হন। ছ’জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ধৃতদের বৃহস্পতিবার তমলুক আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক বিষ্ণুপদ এবং সঞ্জীবকে চার দিনের পুলিশ হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিনের জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। আদালত চত্বরে বিষ্ণুপদর দাবি, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ কিন্তু কেন তিনি পূর্ব মেদিনীপুরে এসেছিলেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে রয়েছেন বিষ্ণুপদ। এক সময় দলের জলঙ্গি ব্লকের সভাপতি ছিলেন। পরে জলঙ্গি উত্তর জোনের কাযর্করী সভাপতির দায়িত্ব পান। মান্নান হোসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি হওয়ার পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে বিষ্ণুপদর। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে সেই দূরত্ব আরও বাড়ে। যদিও ভোটের সময় দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারও করেছিলেন। প্রায় ঝেড়ে ফেললেও দল তাঁকে বহিষ্কারের পথে হাঁটেনি।
ওই এলাকার এক তৃণমূল নেতা মানছেন, বিষ্ণুপদর জন্য দলের মুখ পুড়েছে বহুবার। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে দলের সংগঠন সামলানোয় ওই নেতাকে তাড়ানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy