ফাঁসিদেওয়া ব্লকে নির্বাচনী সভায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক দেবাশিস প্রামাণিক। —নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীদের ঠেকানোর ‘নিদান’ দিলেন শাসকদলের পর্যবেক্ষক দেবাশিস প্রামাণিক। কী ভাবে নির্দলদের ঠেকাতে হবে, সে ‘উপায়’ও বলে দিলেন তিনি। নির্বাচনী সভায় দেবাশিসের ‘নিদান’— নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে ঢুকতে বা মিটিং করতে দেবেন না। এমনকি, তৃণমূলের কোনও কর্মী নির্দলীয়দের সঙ্গে ঘোরাফেরা করলে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
দেবাশিসের ভাষণের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও তিনি এমন মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন খোদ দেবাশিস।
চলতি মাসের ২৬ তারিখ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন। তাতে তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধদের’ নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এমনই এক প্রার্থী, ফাঁসিদেওয়া ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি আখতার আলি। আসন্ন নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ৮ নম্বর ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা করেছেন তিনি৷ নির্দলীরা যে শাসকদলের জয়ের পথে কাঁটা, তা মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কারণ, সাম্প্রতিককালে নির্বাচনগুলিতেও প্রধান বিরোধী শক্তির পাশাপাশি নির্দল প্রার্থীদের জয়ের রেখচিত্র বেশ ভাল।
নির্দলীয়দের আটকাতে নিজস্ব ‘দাওয়াই’ দিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা ফাঁসিদেওয়া ব্লকের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক দেবাশিস প্রামাণিক। অনেকের দাবি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় গৌতম দেবের ঘনিষ্ট হিসাবে পরিচিত দেবাশিসই শেষ কথা! সম্প্রতি ফাঁসিদেওয়া ব্লকের চটহাট এলাকায় নির্বাচনী সভায় নির্দলদের আটকাতে তাঁর নিদান, ‘‘এ এলাকায় নির্দল প্রার্থী যেন মিটিং করতে না পারেন। ঘরে ঘরে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছে তৃণমূল৷ ফলে তৃণমূল ছাড়া এখানে কেউ থাকতে পারবে না৷ যদি সত্যিকারের তৃণমূলকর্মী হন, তা হলে নির্দলীয় প্রার্থীকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। কেউ কিছু বললে আধ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ পৌঁছে যাবে।’’ দেবাশিসের আরও দাবি, ‘‘পুলিশ, এসডিও, বিডিও, জেলাশাসক আমাদের। মুখ্যমন্ত্রীও আমাদের। তৃণমূলকে হারানোর দম নেই নির্দলীয়দের।’’ সেই সঙ্গে তাঁর হুমকি, ‘‘নির্দলের সঙ্গে যদি কোনও তৃণমূলকর্মী ঘোরাফেরা করেন, তাঁর বাড়িতে পুলিশ পৌঁছে যাবে৷ তাঁকে জেলে পোরা হবে। নির্দলকে একদম শেষ করে দেব। দল করলে তৃণমূল করতে হবে। তৃণমূল ছাড়া এখানে কিছু থাকবে না। ঝান্ডা থাকলে তৃণমূলের ঝান্ডা ছাড়া অন্য কিছু থাকবে না। যুব ভাইদের বলছি, নির্দলের ঝান্ডা, ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলতে হবে। নির্দল প্রার্থী হুমকি দিলে আমাকে ফোন ফোন করবেন। আধ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ পৌঁছবে। সেই নির্দলকে জেলে কী ভাবে পুরতে হয়, সেটা দেখাব।’’
নির্বাচনী সভায় দেবাশিসের ভাষণের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। যদিও দেবাশিসের দাবি, তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। এটা আমার গলা কি না, কী করে বুঝবেন? আমি ওই সব কিছু বলিনি।’’ তবে যে প্রার্থীর উদ্দেশে এই মন্তব্য করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই আখতার আলি বলেন, ‘‘নির্দল প্রার্থীকে আটকানোর জন্য প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আসলে তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। হতাশা থেকে নেতাদের মুখ থেকে এ ধরনের কথা বার হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয় নিয়ে অভিযোগ জানাব। এর বিরুদ্ধে যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাব।’’ যদিও ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী আইনুল হকের পাল্টা দাবি, ‘‘কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি। আমাদের দল এ ধরনের কাজে লিপ্ত নয়।’’
তবে এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি (সমতল) পাপিয়া ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দেবাশিস প্রামাণিক যদি এ ধরনের কথা বলে থাকেন, তবে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ এ ধরনের কথা বলার প্রয়োজন ছিল না। মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে। কাউকে ধমকে চমকে নির্বাচন করব না।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy