(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
২০ জন যদি দুর্নীতি করেই থাকে, তা হলে তাদের শাস্তি হোক। কিন্তু তাদের জন্য কোটি কোটি মানুষকে বঞ্চিত হতে হবে কেন? বাংলার বকেয়া আদায়ে রবিবার দিল্লির কর্মসূচিতে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে শনিবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এই ভাষাতেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ‘প্রত্যয়ী’ ঘোষণা— ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনায় বাংলার প্রাপ্য ১৫ হাজার কোটি টাকা, তা ছাড়াও অন্যান্য আরও পাওনা রয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকা। সেই টাকা তৃণমূল আদায় করেই ছাড়বে! যে আন্দোলনের সূচনা হতে চলেছে ২ অক্টোবর দেশের রাজধানী দিল্লি থেকে।
শনিবার দুপুরে ১৮ মিনিট ধরে ফেসবুকে বার্তা দেন অভিষেক। তাঁর মূল নিশানায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আক্রমণও ছিল চাঁছাছোলা। মোদীর উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনি যদি ভাবেন বোতাম টিপে গরিব মানুষের টাকা বন্ধ করবেন, তা হলে আগামী দিনে মানুষও বোতাম টিপে আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দেবে।’’ মোদী সরকারকে ‘স্বৈরতন্ত্রী’ বলেও আক্রমণ করেছেন তিনি। দিল্লির এই কর্মসূচির আগে পরিকল্পনা করেই ‘আবহ’ তৈরি করা শুরু করেছিল তৃণমূল। কর্মসূচির নির্ধারিত দিন যত এগিয়েছে, তত তৃণমূলের আক্রমণের ঝাঁজও বেড়েছে। তাতে আরও ইন্ধন যুগিয়েছে কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে অভিষেককে ইডি তলব করা এবং দিল্লিযাত্রার জন্য বিশেষ ট্রেনের আর্জি রেল বাতিল করে দেওয়া।
শনিবার অভিষেক বোঝাতে চেয়েছেন, হঠাৎ করে তাঁরা দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। ‘বাধ্য’ হয়েই তৃণমূলকে এই পথে হাঁটতে হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘‘এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বকেয়া টাকা ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন। তার পর আমরা সাংসদেরা গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তার পরেই আমরা দিল্লিতে বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর আছড়ে ফেলার পথে যাচ্ছি।’’
২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীতে রাজঘাটে প্রার্থনা করবেন তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতিরা। ওই দিন রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানাবেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ৩ তারিখ যন্তরমন্তরে সমাবেশ করবে তৃণমূল। অভিষেক বলেন, ‘‘৩ তারিখ যদি এক জনও গরিব মানুষের গায়ে দিল্লিতে আঁচড় লাগে, তা হলে গণতান্ত্রিক ভাবে ইটের বদলে পাথর দিয়ে জবাব কী ভাবে দিতে হয়, তা তৃণমূল জানে। আমাদের বিধায়ক, সাংসদদের মারুন। আপত্তি নেই। কিন্তু কোনও গরিব মানুষের গায়ে যেন হাত না পড়ে!’’
২১ জুলাইয়ের সভা থেকে দিল্লির এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। বাংলার শাসকদলের পরিকল্পনা ছিল, এক লক্ষ মানুষকে রাজধানীতে নিয়ে যাবে তারা। কিন্তু দিল্লির রামলীলা ময়দান চেয়েও পায়নি তৃণমূল। তার পরে একটি ট্রেন ভাড়া করেছিল তারা। টাকা জমা নেওয়ার পরেও শুক্রবার তা বাতিল করে দেন রেল কর্তৃপক্ষ। অতঃপর বাসে কলকাতা থেকে জমায়েত দিল্লির উদ্দেশে পাঠানো শুরু করেছে তৃণমূল। অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘ট্রেন বাতিল করে, ইডিকে দিয়ে সমন পাঠিয়ে তৃণমূলকে রুখে দেওয়া যায় না! কর্মসূচি যখন হবে বলেছি, তখন হবেই।’’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেককে ৩ তারিখ ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওই দিন তিনি দিল্লির কর্মসূচিতেই থাকবেন। যার অর্থ, ইডি দফতরে তিনি যাবেন না।
অভিষেক শনিবার এ-ও বলেন যে, বাংলার গরিব মানুষকে তাঁদের হকের পাওনা না দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিমান কেনা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে নতুন সংসদ ভবন। রবিবার দিল্লি রওনা হওয়ার আগে শনিবার দলকেও কর্মসূচি দিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। নির্দেশ দিয়েছেন, ৩ অক্টোবরের দিল্লির ধর্না-অবস্থান সমস্ত গ্রামে দেখানোর বন্দোবস্ত করতে হবে স্থানীয় নেতাদের।
এখন দেখার, ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লি পুলিশ তৃণমূলের আন্দোলন সম্পর্কে কী মনোভাব নেয়। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রশাসিত দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার যে দিল্লি পুলিশের, তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy