Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কাটমানি-কাণ্ড: সৎ কে? পাল্টা ওষুধের খোঁজ তৃণমূলের

তৃণমূল-গড়ে গেরুয়া। বাড়ছে কাটমানি-ক্ষোভও। কারণ কী? জেলাওয়াড়ি অন্বেষণতৃণমূল-গড়ে গেরুয়া। বাড়ছে কাটমানি-ক্ষোভও। কারণ কী? জেলাওয়াড়ি অন্বেষণ

বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সেই কাউন্সিলর মৌ রায়। —নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সেই কাউন্সিলর মৌ রায়। —নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৪
Share: Save:

তিনি গিয়েছেন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে। অপেক্ষা করতে যে-ঘরে বসানো হল, সেটা মেদিনীপুর পুরসভার কাটমানি বিতর্কে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে বেঁধা কাউন্সিলর মৌ রায়ের বাড়ির অফিসঘর। দেওয়াল জুড়ে স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। ঘরগুলি ছাড়া দোতলা বাড়িটার বাইরে-ভিতরে প্লাস্টার করা হয়নি। সিঁড়ির উপরে ছাদ নেই। বৃষ্টির জল আটকাতে টিনের চালে প্লাস্টিক বাঁধা।

ঘরে ঢুকেই মৌ বললেন, ‘‘কারও থেকে একটা পয়সাও নিইনি। যাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার মানহানির মামলা করে এলাম। আবেগের বশে কাটমানি নিয়ে প্রকাশ্যে ওই সব বলে দিদি ঠিক করেননি। একে ভোটের এই রকম ফল, তার উপরে কাটমানি! বিজেপি একেবারে লুফে নিয়েছে। আমাদের কাজ করাই কঠিন হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার কথা হয়তো দিদির খারাপ লেগেছে। কিন্তু এখনও বলব, দলের ছেলে কারও কাছ থেকে টাকা চাইলে আমি কি সেটা প্রকাশ্যে বলব? যাঁরা এ-সব করছেন, তাঁদের গোপনে ডেকে সাবধান করাই যেত!’’

অবিভক্ত মেদিনীপুরে তো বটেই, পূর্ব এবং পশ্চিমে ভাগ হওয়ার পরেও ওই দুই জেলায় গত লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তৃণমূলের প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। অথচ এ বার এখানে জঙ্গলমহলের দু’টি লোকসভা আসনই গিয়েছে বিজেপির দখলে। বিধানসভা কেন্দ্রের নিরিখে অন্যান্য লোকসভা কেন্দ্রেও জয়ের ব্যবধান কমেছে। এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই তৃণমূলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কাটমানি নিয়ে দলনেত্রীর বক্তব্য। অন্যান্য জেলার মতো মেদিনীপুরেও প্রায় প্রতিদিনই কাটমানি ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ-ঘেরাও চলছে। এই পরিস্থিতিতেই মৌ বলেছিলেন, ‘‘দিদি যদি মনে করে থাকেন তিনি একাই সৎ, তা হলে ভুল করছেন। আমাদের মতো কিছু মানুষও (সৎ) রয়েছেন।’’ এ-হেন মন্তব্যে শোরগোল পড়ে নানা মহলে। অনেকেই একে পিঠ বাঁচানোর কৌশল হিসেবে দেখেন।

জেলা ঘুরে দেখা গেল, তৃণমূলের সকলেই এখন পিঠ বাঁচাতে তৎপর। সেই সুযোগে ব্লকে ব্লকে চলছে ‘কাটমানি আন্দোলন’। তবে তৃণমূলের দাবি, সেই সব আন্দোলনের বেশির ভাগই যত না সাধারণ মানুষ করছেন, তার চেয়ে বেশি ‘লাফাচ্ছে বিজেপি’! দিন কয়েক আগে ঘাটাল ব্লকের দেওয়ানচক ১ পঞ্চায়েতের কুঠিঘাট বাজারে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির ১৪ জন তৃণমূল সদস্যের নামে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগে পোস্টার পড়ে। দাবি করা হয়, ‘জব কার্ডের টাকা লোপাট। মাটি না-কেটে অ্যাকাউন্টে টাকা।’ তবে কারা পোস্টার দিয়েছেন, তার উল্লেখ সেখানে ছিল না।

মেদিনীপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক পাড়ায় আবার ‘কাটমানির টাকা ফেরত চাই’ লেখা পোস্টার পড়ে সেখানকার বিদায়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। সঙ্গে নীচে লেখা ছিল, ‘২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাবাসী বৃন্দ’। বেলা গড়াতে পাল্টা ফ্লেক্সে চোখে পড়ে, ‘যারা ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলরের নাম লিখে কুৎসা করেছেন, আমরা ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকবৃন্দ তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি’। এ ক্ষেত্রেও সঙ্গে লেখা, ‘২ নম্বর ওয়ার্ড অধিবাসী বৃন্দ।’ সাধারণ মানুষের সরাসরি টাকা ফেরতের দাবি এ ক্ষেত্রেও দেখা যায়নি। কাটমানি বিক্ষোভের একই চিত্র দেখা গিয়েছে শালবনিতে। এ ক্ষেত্রে নিশানা ছিল তৃণমূলের কর্ণগড় অঞ্চলের সভাপতির ভাদুতলার বাড়ি। জেলা পুলিশের দাবি, সাধারণ কোনও ভুক্তভোগী নন, বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারাই।

বিজেপি যে এ ভাবে সাধারণ মানুষকে সামনে রেখে রাজনীতির পালে হাওয়া তুলতে চাইছে, তার ইঙ্গিত রয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের কথায়। মেদিনীপুরে সভা করে তিনি বলছেন, ‘‘আপনারা কাটমানি চাইতে যান। সঙ্গে থাকবে বিজেপি।’’ আবার আন্দোলন জোরদার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাটমানি নেওয়ার প্রমাণ মিলছে না বলে পুলিশের দাবি। যেমন, কাউন্সিলর মৌয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী প্রোমোটার বিদ্যুৎ ঘোষ বলতে পারলেন না, তিনি কী ভাবে টাকা দিয়েছিলেন এবং কবে দিয়েছিলেন! দেখা করে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘সত্যি কথাই বলেছি। টাকা দেওয়ার প্রমাণ রাখা হয়নি, এটা ভুল হয়েছে।’’

তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি অজিত মাইতির অভিযোগ, ‘‘এক কালের সিপিএমের হার্মাদদের নিয়ে কাটমানি প্রশ্নে ঝামেলা করছে বিজেপি। তাদের কাজকর্মকে মানুষের আন্দোলন বলে চালানো হচ্ছে।’’ দিল্লি থেকে ফোনে দিলীপবাবু বললেন, ‘‘মানুষ বিজেপিকে চাইছে। তাই বিজেপি মানুষের আন্দোলন করছে। আবার বলছি, কেউ কাটমানি খেয়ে থাকলে আমাদের জানান। তাঁর ব্যবস্থা করে দেব!’’

মেদিনীপুরেরই এক তৃণমূল কাউন্সিলর বললেন, ‘‘দিদি কাটমানির কথা বলেছেন। তিনিই এ বার কাটমানি প্রশ্নে বিজেপি-কে পাল্টা দেওয়ার ওষুধ বার করুন!’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Bribe Bribery Scandal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy