Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Shahjahan Sheikh

শাহজাহান শেখ নিয়ে অখিলের মন্তব্যে সায় নেই দলের, কারামন্ত্রীকে সতর্ক করে বোঝালেন ফিরহাদ

শনিবার কলকাতা পুরসভায় নিজের দফতরে অখিলকে ডেকে পাঠান ফিরহাদ। নিজের ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচির পর তাঁর সঙ্গে পুরসভাতেই দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন তিনি।

TMC does not agree with Akhil Giri\\\'s comments on Shahjahan Sheikh.

(বাঁ দিক থেকে) অখিল গিরি, শেখ শাহজাহান, ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৮
Share: Save:

বেপাত্তা শাহজাহান শেখকে নিয়ে তাঁর করা মন্তব্যে সায় নেই দলের। এমনটাই বুঝিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হল কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে। শনিবার এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূল সূত্রে খবর, একান্ত বৈঠক করে অখিলকে এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলেছেন কলকাতার মেয়র।

বৃহস্পতিবার শাহজাহান সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অখিল বলেছিলেন, ‘‘শেখ শাহজাহান চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। উনি অসুস্থ ছিলেন। তবে এখন কোথাও আছেন, নিশ্চিত ভাবে পুলিশ তা খুঁজে বার করবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘অপরাধীকে ছাড়া হবে না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি হয়তো বাইরে কোথাও আছেন। কিন্তু পুলিশ চুপচাপ বসে নেই।’’ রেশন দুর্নীতির তদন্ত সূত্রে গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখানে পৌঁছে তারা বিক্ষোভের মুখে পড়ে। গ্রামবাসীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে ইডির তদন্তকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মার খান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। ইডির তিন আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তাঁদের মধ্যে এক জনের চোট ছিল গুরুতর। ওই দিন থেকে শাহজাহানের আর দেখা মেলেনি। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি অন্তরালে থেকেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ছবি বদল করে প্রশাসনে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও, শনিবার সেই ছবি ওই অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেওয়া হয়। কিন্তু কারামন্ত্রীর এক জন ফেরার ব্যক্তিকে নিয়ে এ হেন মন্তব্যের জেরে অস্বস্তিতে পড়েছিল রাজ্য সরকার।

সেই মন্তব্যের জেরেই শনিবার কলকাতা পুরসভায় নিজের দফতরে অখিলকে ডেকে পাঠান ফিরহাদ। নিজের ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচির পর তাঁর সঙ্গে পুরসভাতেই দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেই অখিলকে দলের অবস্থান জানিয়ে এই ধরনের মন্তব্য না করার কথা বলেন ফিরহাদ। তবে কলকাতা পুরসভায় মেয়রের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও, শাহজাহান নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়নি বলেই জানিয়েছেন কারামন্ত্রী অখিল। কারণ, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান কোথায়? এ নিয়ে বিবিধ দাবি শোনা গেলেও ইডি আধিকারিকদের মার খাওয়ার ২৩ দিন পরেও তাঁর খোঁজ মেলেনি। সেই আবহেই নিখোঁজ শাহজাহান প্রসঙ্গে রাজ্যের এক মন্ত্রী মন্তব্য করলে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতর। তাই দল এবং সরকারের অস্বস্তি কাটাতেই ফিরহাদ সতর্ক করেছেন অখিলকে।

প্রসঙ্গত, এই বৈঠকের আগে শনিবার সিরিটি শ্মশানে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘শাহজাহান যা করেছে অন্যায় করেছে। আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। যেটা করেছে, নিশ্চিত করে বলছি, অন্যায় করেছে!’’ এর আগে পর্যন্ত শাহজাহানের এত কঠোর সমালোচনা তৃণমূলের কোনও বড় মাপের নেতার মুখে প্রকাশ্যে শোনা যায়নি। সে অর্থে ফিরহাদই প্রথম। হঠাৎ কেন এত দিন পর শাহজাহানের প্রকাশ্য সমালোচনা করলেন শাসকদলের দাপুটে এক নেতা? তার কোনও প্রকাশ্য ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে তৃণমূলের মধ্যে গুঞ্জন, ইডির বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সামনে হাজির হতে পারেন। অনেকের মতে, সেটা বুঝেই ববি আগেভাগে শাহজাহানের সমালোচনা করে রাখলেন। সঙ্গে তাঁকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা অখিলকেও সর্তক করলেন ফিরহাদ। সম্প্রতি শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশির পরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সেখানে নোটিস সেঁটে এসেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ২৯ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে ইডির সামনে হাজিরা দিতে হবে। সেই দিন আগামী সোমবার। তৃণমূলের মধ্যে জল্পনা, সেই দিনই শাহজাহান অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। মার খেয়ে ফেরার ২০ দিনের মাথায় গত বুধবার আবার সন্দেশখালিতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে ছিল রাজ্য পুলিশও। যদিও সবই হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। স্থানীয় পুলিশের প্রহরায় এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তালা ভেঙে শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকে ইডি। সে দিনই শাহজাহানের বাড়িতে নোটিস সাঁটিয়ে ইডি জানিয়ে এসেছিল, পাঁচ দিনের মধ্যে শাহজাহানকে হাজিরা দিতে হবে। সোমবার শেষ হচ্ছে সেই সময়সীমা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE