নেতাজি ইন্ডোরের মহাসমাবেশ থেকে গত বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ‘ভূতুড়ে ভোটার’ ঢুকিয়ে বাংলা দখলের পরিকল্পনা নিয়েছে। ভোটার তালিকার ‘ভূত’ ধরতে গোটা সংগঠনকে ময়দানে নামতেও বলেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তার এক সপ্তাহ পরে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে বৈঠকশেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ভোটার কার্ডে ‘ইউনিক আইডি’ চালুর দাবি জানিয়ে এল শাসকদল। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে তৃণমূলের ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে বেরিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘বাংলার ভোটকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা করছে বিজেপি। একই এপিক নম্বরে বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার কার্ড থাকা চলবে না। আধার কার্ড, পাসপোর্টে যেমন থাকে তেমন ভাবে ভোটার কার্ডেও ইউনিক আইডি চালু করতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, নির্বাচনে সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিলেন মমতাই। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল নির্বাচনে সচিত্র পরিচয়পত্র চালু করা। ৩২ বছর পর ভোটার কার্ডের সংস্কার নিয়ে নতুন আন্দোলনের সলতেও পাকানো শুরু হয়েছে সেই মমতার নেতৃত্বে। মমতার অভিযোগ, ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়েই দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। দিল্লির নির্বাচনের পরে বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আনা হয়েছে অ-বিজেপি দলগুলির তরফে। যার অন্যতম, ২০২০ সালে দিল্লি বিধানসভা ভোটের পর থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট পর্যন্ত রাজধানীতে যে সংখ্যায় ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছিল, প্রায় সমপরিমাণ ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে গত লোকসভার পর থেকে শেষ বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত। অর্থাৎ, দিল্লিতে চার বছরে যে সংখ্যায় ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছিল, সাত মাসে প্রায় সমপরিমাণ ভোটার বেড়েছে। এই বৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’, ‘ভূতুড়ে’ বলে তোপ দেগেছে বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে বেরিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘অনলাইনে যাঁরা নাম তুলছেন, তাঁদের বিষয়ে ফিজ়িক্যাল ভেরিফিকেশন করতে হবে। ভিন্রাজ্যের কেউ যেন বাংলায় এসে ভোট না দিতে পারেন, তা-ও কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।’’
তৃণমূলের অভিযোগ, আগে ভোটার কার্ডে বিধানসভা এবং লোকসভা কেন্দ্রের কথা উল্লেখ থাকত। কিন্তু নতুন প্রক্রিয়ায় তা থাকছে না। এতেই ‘চক্রান্ত’ রয়েছে বলে মনে করছে বাংলার শাসকদল। মমতা অভিযোগ তোলার পরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন বলেছিল, একই এপিক নম্বর নতুন কথা নয়। কিন্তু সেই নম্বর কখনওই একই রাজ্যে নয়। ফলে গোলমাল হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। পাল্টা তৃণমূলের চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘ও সব কথার কোনও মানে নেই। কমিশনের ২৮ নম্বর রুলে যা রয়েছে, তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা বলেছি কমিশনকে আইন মেনে যা করার করতে হবে।’’