বৃহস্পতিবার বেহালার লোকনাথ আবাসনে ভজার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় সিবিআই। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।
সিবিআই যখন তাঁর ফ্ল্যাটে তল্লাশির জন্য এসেছিল, তখন তিনি বাড়ি ছিলেন না। এমনটাই জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়-‘ঘনিষ্ঠ’ পার্থ সরকার ওরফে ভজা। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, সিবিআই কিছু না পেয়েই ফিরে গিয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের নাম জড়ানোর পর থেকে এই ভজার নামও শোনা যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার বেহালার লোকনাথ আবাসনে ভজার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় সিবিআই। এ প্রসঙ্গে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ভজা বলেন, ‘‘সিবিআই এসেছিল। আমি ছিলাম না। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। পরে এলাম।’’ বিকেল ৫টা নাগাদ তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সিবিআইয়ের দল। এর পর তিনি জানান, সিবিআই কিছু না পেয়ে চলে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা কিছু পেল না। চলে যাচ্ছে।’’
২০২১ সালে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলে কাউন্সিলর হন ভজা। তার প্রায় ২০ বছর আগে থেকেই তিনি বেহালায় ‘রাজ’ করতেন বলে স্থানীয়দের দাবি। ২০০১ সালে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক হন পার্থ। তাঁর হাত ধরেই বেহালায় প্রবেশ ভজার। বেহালার বাসিন্দা না হয়ে এবং প্রত্যক্ষ ভাবে তৃণমূলের কোনও পদে না থেকে বকলমে তিনিই নাকি স্থানীয় নেতৃত্বকে চালনা করতেন। প্রকাশ্যে দাবি করতেন, ‘‘আমি তৃণমূল করি না, পার্থ চট্টোপাধ্যায় করি।’’
বিরোধীদের দাবি, পার্থ বিধায়ক হলেও বেহালা পশ্চিমের ‘অঘোষিত বিধায়ক’ ছিলেন ভজা-ই। বেহালার সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, ঘনিষ্ঠ ভজার চোখ দিয়েই বেহালা পশ্চিমকে দেখতেন পার্থ। তাঁকে অনেক ভরসাও করতেন। বেহালা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দায়িত্বও ছিল ভজার কাঁধেই। এমনকি, বিগত পুরভোটে তাঁকে স্থানীয় নেতৃত্বের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে খানিক জোর করেই ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড় করিয়েছিলেন পার্থ। আর তা নিয়ে নাকি স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভও জন্মেছিল।
তৃণমূল কাউন্সিলর ভজা কোনও রকম দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন কি না, এখনও পর্যন্ত তার কোনও প্রমাণ না মিললেও তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ বিস্তর। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন বেহালার স্থানীয় বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্ব। আড়ালে-আবডালে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন স্থানীয়েরাও।
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সমাজবিরোধীদের আশ্রয় দেওয়া, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চালানো, অসাধু কাজে মদত দেওয়ার মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ‘ভজা’। বেহালার বুকে বেনামে তাঁর বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সিপিএমের অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেত্রী তথা বেহালা পশ্চিমের সিপিএম নেত্রী রত্না রায় মজুমদারকে পুরভোটে ব্যাপক রিগিং করে হারিয়েছিল ভজাবাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের গ্রেফতারির পর থেকেই বেহালার বুকে প্রভাব কমেছে সরকার পার্থের। এলাকাতেও তাঁকে আর বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে বেহালার ম্যানটনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর যে অফিস ছিল, তার বাইরে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। সেই তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ ওরফে ‘ভজা’র বাড়িতেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তল্লাশি চালিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় পার্থ সরকারের ছবি হিসাবে যা প্রকাশিত হয়, সেটি ‘ভজা’র নয়। অনবধানতাবশত অন্য পার্থ সরকারের ছবি প্রকাশিত হয়। বিষয়টি জানতে পারার পর আমরা সেই ছবি পরিবর্তন করে দিয়েছি। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy