স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের গ্রেফতারির পর থেকেই বেহালার বুকে দহরম মহরম কমেছে সরকার পার্থের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর নামও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। পার্থ-ঘনিষ্ঠ হিসাবে বেশ কয়েক বার তাঁর নামও উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে। তিনি ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। ঘটনাচক্রে, তাঁর নামও পার্থ। তবে সরকার। বেহালাবাসীরা চেনেন ‘ভজা’ নামেই। সেই ‘ভজা’র বেহালার লোকনাথ আবাসনের ফ্ল্যাটেই বৃহস্পতিবার তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল। সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতেই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান। বিকাল ৫টা নাগাদ তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই যখন এসেছিল তখন আমি ছিলাম না। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। পরে এলাম। ওরা কিছু না পেয়ে চলে গেল।’’
কিন্তু কে এই ভজা? রাজনীতিতেই বা আগমন কী ভাবে? ২০২১ সালে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলে কাউন্সিলর হন ভজা। কিন্তু তার প্রায় ২০ বছর আগে থেকেই তিনি বেহালায় ‘রাজ’ করতেন বলে স্থানীয়দের দাবি।
২০০১ সালে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক হন পার্থ। তাঁর হাত ধরেই বেহালায় প্রবেশ ‘ভজা’র। বেহালার বাসিন্দা না হয়ে এবং প্রত্যক্ষ ভাবে তৃণমূলের কোনও পদে না থেকেও বকলমে তিনিই নাকি স্থানীয় নেতৃত্বকে চালনা করতেন। প্রকাশ্যে দাবি করতেন, ‘‘আমি তৃণমূল করি না, পার্থ চট্টোপাধ্যায় করি।’’ বিরোধী দলগুলির দাবি, পার্থ বিধায়ক হলেও বেহালা পশ্চিমের ‘অঘোষিত বিধায়ক’ ছিলেন ভজা-ই। বেহালার সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, ঘনিষ্ঠ ভজার চোখ দিয়েই বেহালা পশ্চিমকে দেখতেন পার্থ। তাঁকে অনেক ভরসাও করতেন। বেহালা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দায়িত্বও ছিল ভজার কাঁধেই। এমনকি, বিগত পুরভোটে তাঁকে স্থানীয় নেতৃত্বের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে খানিক জোর করেই ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড় করিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর তা নিয়ে নাকি স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভও জন্মেছিল।
তৃণমূল কাউন্সিলর ভজা কোনও রকম দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন কি না, এখনও পর্যন্ত তার কোনও প্রমাণ না মিললেও তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ বিস্তর। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে বেহালার স্থানীয় বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্ব। আড়ালে-আবডালে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন স্থানীয়রাও।
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সমাজবিরোধীদের আশ্রয় দেওয়া, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চালানো, অসাধু কাজে মদত দেওয়ার মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ‘ভজা’। বেহালার বুকে বেনামে তাঁর বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সিপিএমের অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেত্রী তথা বেহালা পশ্চিমের সিপিএম নেত্রী রত্না রায় মজুমদারকে পুরভোটে ব্যাপক রিগিং করে হারিয়েছিল ভজাবাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের গ্রেফতারির পর থেকেই বেহালার বুকে প্রভাব কমেছে সরকার পার্থের। এলাকাতেও তাঁকে আর বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে বেহালার ম্যানটনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর যে অফিস ছিল, তার বাইরে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
সেই তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ ওরফে ‘ভজা’র বাড়িতেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানা প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন বোরো চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা অঞ্জন দাস বলেন, ‘‘সিবিআই সিবিআইয়ের কাজ করছে। এতে আমাদের কী বলার থাকতে পারে।’’
অন্য দিকে, বেহালার বাসিন্দা তথা বিজেপি নেত্রী রাখি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতিতে যাঁরা জড়িত তাঁরা বাংলার কতটা ক্ষতি করেছেন, তা মানুষ বুঝতে পারছে। আদালতের নির্দেশে যে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে, তাতে অনেক রাঘব বোয়াল ধরা পড়েছে। আগামী দিনেও পড়বে। বেহালাবাসী হিসাবে আমাদের দাবি, বেহালায় শাসকদলের যাঁরা এই দুর্নীতিতে জড়িত তাঁদের যেন কোনও ভাবেই ছাড়া না হয়। সিবিআইয়ের পদক্ষেপে কোনও ভুল দেখছি না।’’
সূত্রের খবর, ভজা ছাড়াও সিবিআইয়ের র্যাডারে বেহালার আরও দুই তৃণমূল কাউন্সিলর রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন শাসকদলের উপরমহলের নেতাদের কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত বলেও সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy