Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
নানুর পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা

আরও কোণঠাসা কাজল

দলের জেলা সভাপতি পুলিশের কাছে আগেই তাঁর গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও চাপ বাড়ল কাজল শেখের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

দলের জেলা সভাপতি পুলিশের কাছে আগেই তাঁর গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও চাপ বাড়ল কাজল শেখের।

সোমবার নানুরের ওই দাপুটে নেতার দখলে থাকা দলেরই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিলেন সহ সভাপতি ও পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ-সহ ১৭ জন সদস্য। যাঁদের অধিকাংশই এলাকার রাজনীতিতে কাজলের ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত। মুখে সভাপতির বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনুপস্থিতির অভিযোগ আনলেও গোটা ঘটনায় জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাতই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী অনুব্রত। তাই বিধানসভায় নানুর হারিয়েও কাজলের অনুপস্থিতিকে কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি। আর কাজল অনুগামীদের হাতে থাকা ওই পঞ্চায়েত সমিতি দখলে এলে নানুর পুনর্দখলের লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে যাবে জেলা সভাপতি গোষ্ঠী।

দিনের শেষে ওই ঘটনায় নানুরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই আরও এক বার বেআব্রু হল। যদিও গত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩১ আসনের ওই পঞ্চায়েত সমিতির সব ক’টিই দখল করেছিল তৃণমূল। সে সময় এলাকার নেতা কাজল শেখ এবং তাঁর অনুগামী তথা নানুরের বিদায়ী বিধায়ক গদাধর হাজরার যুগলবন্দির দাপটে অনুব্রত গোষ্ঠী অধিকাংশ আসনে কোনও প্রার্থীই দিতে পারেননি। অনুব্রত গোষ্ঠীর প্রার্থী ছিল মাত্র ৯টি আসনে। ওই সব প্রার্থীদের কার্যত ব্রাত্য রেখে অনুগামী চিন্তা মাঝিকে সভাপতি করে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গড়েন কাজল-গদাধর। পরে অবশ্য পঞ্চায়েত, বালিঘাট-সহ এলাকার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দখলকে ঘিরে কাজল-গদাধরেরও বিরোধ লাগে। গদাধর যোগ দেন অনুব্রতর শিবিরে। কিন্তু তার পরেও এলাকার অধিকাংশ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি রয়ে যায় কাজলেরই নিয়ন্ত্রণে। পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের আসনটি হাতছাড়া হওয়ার পরে গত বিধানসভায় নানুর কেন্দ্রে সেই গদাধরের হারের নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজলকেই চিহ্নিত করেছে অনুব্রত গোষ্ঠী।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, নানুরের আসনটি ছিল অনুব্রতর সম্মানরক্ষার লড়াই। সে ক্ষেত্রে ওই আসন হাতছাড়া হওয়াটা মেনে নিতে পারেননি তিনি। ভোটের ফলের দিন প্রকাশ্যে কার্যত সে কথাই জানিয়েছিলেন অনুব্রত। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে তাই কাজলকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন অনুব্রত। শনিবারই বর্ধমানে একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই কাজলকে গ্রেফতার করার দাবি তোলেন অনুব্রত। পরের দিনই কাজল অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্থানীয় বেলুটি গ্রামে একটি দলীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে অনুব্রত অনুগামীদের বিরুদ্ধে। আর তার পরেই এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে এই অনাস্থা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, অনাস্থার চিঠিতে সই করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মধুসূদন পাল, বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অশোক ঘোষ, মৎস কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত দাস, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ চামেলি হাজরা প্রমুখ। তাঁরা মুখে এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘এই অনাস্থার সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা এখনও কাজলেরই অনুগামী।’’ তাঁদের অভিযোগ, সভাপতি নির্বাচনের পর থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে আসছেন না চিন্তাবাবু। তার জেরে তাঁরা কোনও কাজ করতে পারছেন না। ‘‘মানুষ অনর্থক হয়রান হচ্ছেন। আমাদেরও জবাবদিহি করতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই অনাস্থা এনেছি,’’— দাবি প্রত্যেকেরই। এ নিয়ে কাজলের এ দিন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, গরহাজির থাকার অভিযোগ মানতে চাননি চিন্তাবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কাজলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত বলেই মিথ্যা অভিযোগের শিকার হলাম।’’

গোটা ঘটনায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি অনুব্রতর। তবে, তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘অনাস্থার ওই ঘটনার সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই। সভাপতির ধারাবাহিক অনুপস্থিতির কারণে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল বলেই অন্যান্য সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Samiti TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy