খেজুরির ‘হার্মাদ মুক্তি দিবসে’র অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেতৃত্ব। —নিজস্ব চিত্র।
তেখালি সেতুর দু’দিকে দুই ছবি। এবং তা-ও এই নভেম্বরেই।
উত্তর দিকে নন্দীগ্রাম। সে দিকে এখনও ছবিটা বদলায়নি। চলতি নভেম্বরেও নন্দীগ্রামে ‘রক্তাক্ত সূর্যোদয়ে’র বর্ষপূর্তিতে হাজির ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনাচক্রে তিনি স্থানীয় বিধায়কও। কিন্তু তাল কাটল তেখালি সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে। ১৩ বছরে এই প্রথম শুক্রবার খেজুরিতে ‘হার্মাদ মুক্তি দিবসে’ অনুপস্থিত শুভেন্দু।
২০১০ সাল থেকে ২৪ নভেম্বর দিনটিতে বরাবর খেজুরিতে ‘হার্মাদ মুক্তি দিবস’ পালন করছে তৃণমূল। শুভেন্দু যত দিন তৃণমূলে ছিলেন, তিনিই ছিলেন এর অন্যতম আয়োজক। এমনকি, ২০২০ সালে যখন শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল, তখনও অরাজনৈতিক ব্যানারে এই দিনে মিছিলে হেঁটেছিলেন তিনি। শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পরে তাঁকে সামনে রেখেই গেরুয়া শিবির দিনটি পালন করা শুরু করে।
শুক্রবার তৃণমূলের কর্মসূচি যথারীতি হয়েছে স্থানীয় বাঁশগোড়া বাজারে। সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ, সুদীপ রাহা, জয়া দত্ত, জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক প্রমুখ হাজির ছিলেন। তবে ঘোষণা সত্ত্বেও বিজেপির কর্মসূচি হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে প্রচার করা হয়েছিল, কামারদায় পদযাত্রা এবং পথসভা করবেন শুভেন্দু। তবে শুভেন্দু আসেননি।
হঠাৎ কেন ছন্দপতন? গেরুয়া শিবিরের ব্যাখ্যা, একই দিনে জোড়া কর্মসূচিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ত। তাই ২ ডিসেম্বর শুভেন্দুর উপস্থিতিতে বড় জনসভা হবে খেজুরিতে। এ দিন কৃষ্ণনগরে শুভেন্দুও বলেন, ‘‘আমাদের লোকেরা ওখানে আছে, করেছে। আমি ২ তারিখে সমাবেশ করব।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সহ-সভাপতি তাপসকুমার দোলুইও বলেন, ‘‘তৃণমূল যেখানে কর্মসূচি করেছে, শনিবার সেখানেই প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে। কর্মীদের যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তারও প্রতিবাদ হবে।’’ তৃণমূল নেতা তন্ময়ের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি ও শুভেন্দু আসলে ভয় পেয়েছে।’’
গত বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের মতোই পাশের বিধানসভা খেজুরিতেও পদ্ম ফুটেছিল। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটেও সেখানে সাফল্য পায় বিজেপি। তবে সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলেছে। দলের দুই সদস্য তৃণমূলে যাওয়ায় খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। খেজুরি-১ ব্লকেও দীর্ঘদিনের বিজেপি নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য বুলুরানি করন-সহ দলের বেশ কয়েক জন সাংগঠনিক পদাধিকারী তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। একদা তৃণমূলে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলও ফের সক্রিয়।
বিজেপি অবশ্য শক্তিক্ষয়ের এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তবে জেলা বিজেপির তরফে জানানো হচ্ছে, ‘হার্মাদ মুক্তি দিবসে’র সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগ নেই। শুভেন্দুর ব্যবস্থাপনাতেই কয়েক বছর হল এই কর্মসূচি হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিকের আবার মত, ‘‘সে দিন সিপিএমের যারা এলাকা রক্তাক্ত করেছিল, সেই হার্মাদরা এখন শুভেন্দুর দলের সম্পদ। এলাকায় আসতে সমস্যা তো হবেই।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাসও বলছেন, ‘‘২০১০ সালের ২৪ নভেম্বর ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীরা ফিরতে চেয়েছিলেন। অশান্তি পাকিয়ে শুভেন্দু আর তৃণমূলের লোকজন তা হতে দেননি। তাঁদের অনেকেই এখন বিজেপি করেন। সবে ভেবেচিন্তেই বিজেপি বা শুভেন্দু, কেউই কর্মসূচি করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy