তৃণমূলের জাতীয় স্তরের মুখপাত্রদের তালিকায় ২০ জনের নাম রয়েছে। আর রাজ্য স্তরের তালিকায় নাম রয়েছে ৪০ জনের। — ফাইল ছবি।
দলীয় বৈঠকে গত শুক্রবারই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সতর্ক করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরসভা ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে ফিরহাদকে মুখ খুলতে বারণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এক সপ্তাহ কাটতে না-কাটতেই নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মুখ খুললেন ফিরহাদ। শনিবারই রাজ্য মন্ত্রিসভায় সতীর্থ উদয়ন গুহকে একহাত নিয়েছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাতীয় এবং রাজ্য স্তরে দলের মুখপাত্রদের তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। যেখানে নাম নেই ফিরহাদের। আগেও নাম ছিল না তাঁর। তবে কি নতুন করে তালিকা প্রকাশ করে ফিরহাদকেই বার্তা দিতে চাইল দল? উঠছে প্রশ্ন।
তৃণমূলের জাতীয় স্তরের মুখপাত্রদের তালিকায় ২০ জনের নাম রয়েছে। আর রাজ্য স্তরের তালিকায় নাম রয়েছে ৪০ জনের। জাতীয় স্তরে ভিন রাজ্যের নেতা প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ, ললিতেশ ত্রিপাঠী, মুকুল সাংমা, রিপুন বোরা, সুস্মিতা দেবের যেমন নাম রয়েছে, তেমনই এ রাজ্যের নেতাদেরও নাম রয়েছে। অমিত মিত্র, বাবুল সুপ্রিয়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ডেরেক ও’ ব্রায়েন, জওহর সরকার, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মহুয়া মৈত্ররাও স্থান পেয়েছেন। রাজ্য স্তরে এই প্রথম বার জায়গা পেয়েছেন নেত্রী দোলা সেন। তবে নাম নেই সুপ্রিয় চন্দের। এর আগে তৃণমূলের যুব কমিটি থেকে বাদ পড়েছিল তাঁর নাম। এ বার মুখপাত্রের তালিকা থেকেও তাঁর নাম বাদ পড়ল। প্রেসিডেন্সির সরস্বতী পুজো নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের কারণেই এই ‘বাদ’ কি না তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
তবে তালিকায় আগেও কখনও ছিল না, এ বারও নেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদের নাম। মনে করা হচ্ছে, তিনি যে মুখপাত্রের তালিকায় নেই, সে কথা ‘স্মরণ’ করাতেই শনিবার তড়িঘড়ি মুখপাত্রদের তালিকা প্রকাশ করেছে দল। গত শুক্রবার দলীয় বৈঠকে ‘আস্থাভাজন’ ফিরহাদকে ধমকেছিলেন মমতা। নেত্রী তাঁকে বলেন, ববি বেশি কথা বলছেন। তিনি যেন শুধু পুরসভা নিয়েই কথা বলেন। তার বাইরে কোনও বিষয় নিয়ে যেন কথা না বলেন। একান্তই যদি বলতে হয়, তা হলে বলার আগে যেন মমতার অনুমতি নেন। এই ‘নির্দেশ’ ববি যেন মনে রাখেন।
যদিও সেই ‘নির্দেশ’ বেশি দিন মনে রাখেননি ফিরহাদ। শনিবার উদয়নের চিরকূট দিয়ে চাকরির প্রসঙ্গে মুখ খোলেন তিনি। সতীর্থ মন্ত্রীকে একহাত নেন। উদয়ন বলেছিলেন, বাম আমলে চিরকূটের মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হচ। এমনকি তাঁর বাবার মাধ্যমেও সেই কাজ হয়েছে। বাম আমলে সর্ব ক্ষণের কর্মীদের ভাতা না দিতে পেরে তাঁদের স্ত্রীদের জন্য চাকরির ‘বন্দোবস্ত’ করে দেওয়া হত বলেও অভিযোগ করেছেন উদয়ন। এই প্রসঙ্গেই ফিরহাদ কটাক্ষ করে জানান, উদয়ন ‘পাগলের মতো’ কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘ও কী পাগলের মতো বকছে, আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমার কোনও বক্তব্যই নেই। কারণ চিরকুটে কোনও দিন লোক ঢোকানো যায় না। একটা আবেদনপত্র লাগে।’’
এই বক্তব্যের মাধ্যমে শুধু যে দলীয় সতীর্থের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন তা নয়, দলনেত্রীর বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। গত শুক্রবারের দলীয় বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা ১৯৯০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট আমলে কারা কারা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বাম আমলে স্রেফ চিরকুট দেখিয়ে অনেকের চাকরি হয়েছে। তার পরেই বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর চাকরি আতশকাচের নীচে আসে। কুণাল ঘোষ এবং ব্রাত্য বসু এই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য দাবি করেন, অনেক সিপিএম কর্মীর পরিবারের সদস্যেরা স্কুল, কলেজের চাকরি পেয়েছেন। সুজনের স্ত্রীর চাকরি নিয়ে তদন্তের ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। অথচ ফিরহাদ শনিবার ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিতে তার ঠিক উল্টো দাবিই করেছেন। জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই চিরকূটের মাধ্যমে কাউকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তার পরেই প্রকাশ করা হল মুখপাত্রদের তালিকা। অনেকেই মনে করছেন, ‘ঘটনাচক্র’ নয়, বরং ফিরহাদকে বার্তা দিতেই তালিকা প্রকাশ।
ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর যখন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তখন থেকে প্রতি বছর মুখপাত্রদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গত প্রায় তিন বছর ধরে এই নিয়ম চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy