সবুজ-গেরুয়া দুই শিবিরই রামনবমীতে মিছিলের নির্দেশ দিয়েছিল। ময়নাগুড়ি থেকে মালদহ সর্বত্রই তা নিয়ে চলল টক্কর। গেরুয়া উত্তরীয় কাঁধে ঝুলিয়ে রবিবার সকালে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে মিছিল করেছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও। বিকেলে মালদহে হাঁসুয়া, ছোট তরোয়াল নিয়ে হাতে নিয়ে রামনবমীর মিছিল দেখা গিয়েছে। সামনে ছিলেন মালদহ জেলা পরিষদের তৃণমূলের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। গৌরবাবুর বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় অনেকে মিছিলে ছিলেন। কে কী হাতে নিয়েছেন দেখিনি।’’ মিছিলে অস্ত্র দেখা গিয়েছে শিলিগুড়ি এবং ইসলামপুরেও। তবে দিনের শেষে উত্তরবঙ্গের কোনও জেলা থেকেই অপ্রীতিকর ঘটনার কোনও খবর আসেনি। তবে উত্তেজনার আবহে একই মিছিলে পা মেলাতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল-বিজেপি নেতাদেরও।
মিছিলে সৌরভও
আলিপুরদুয়ারের নিউটাউন দুর্গাবাড়ি থেকে মিছিল শুরু হবে বলে জানানো হয়েছিল। আহ্বায়ক ছিল রামনবমী উদযাপন কমিটি। অরাজনৈতিক বলে দাবি করা হলেও, কমিটির সদস্যদের অধিকাংশ বিজেপি ঘেঁষা বলেই পরিচিত মিছিল শুরুর সময়ের আগে বিজেপি নেতারা চলে আসেন। সাজানো ট্যাবেলো এগোতে শুরু করে। আচমকাই সেখানে চলে আসেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, পুরসভায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস দত্ত দত্ত, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপ্ত চট্টোপাধ্যায়-সহ শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় গুঞ্জন। বিজেপি নেতা নেত্রীরা মিছিলের সামনে জায়গা দখল করে এগোতে থাকেন। সৌরভ-সহ তৃণমূল নেতারা ছিলেন মিছিলের মাঝামাঝি। তাঁদের পিছনে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। সবার মাথায় বাঁধা গেরুয়া ফেট্টি। মিছিল কিছুটা এগোনোর পরে দেখা যায় বিধায়ক সৌরভের পাশে হাঁটছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত রায়-সহ অন্যরা। জয়ন্ত জানান, ‘‘আমাদের তুলনায় এদিন তৃণমূলের লোক ছিল হাতে গোনা। এতদিন তৃণমূল রামনবমী পালন করেনি ভোটের জন্য রাম নাম করছে ওরা।’’ তৃণমূল বিধায়ক সৌরভের দাবি, দলের নির্দেশ থাকায় মিছিলে এসেছেন। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘বিজেপিকে ফাঁকা মাঠ ছাড়া হয় না। আমাদের নেতা-সমর্থকরাও মিছিলে ছিল। মানুষ সবই দেখেছে।’’ শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এবং নকশালবাড়িতেও বিজেপি-তৃণমূল নেতাদের এক মিছিলে পা মেলাতে দেখা গিয়েছে। সে মিছিলে অবশ্য তৃণমূলের স্থানীয় স্তরের নেতা-কর্মীরাই ছিলেন। ব্লক বা জেলা স্তরের কাউকে দেখা যায়নি।
দেদার বাজল ডিজে
অতীতের মতোই ডিজে বাজানো নিয়েও নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও রবিবার ইসলামপুর-শিলিগুড়ি থেকে মালদহ কোনও মিছিল দেখেই তা মালুম হওয়ার জোগাড় নেই। রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে রামনবমীর মিছিলে দেখা গেল একাধিক ডিজে বক্স। আর সেই ডিজে বক্স নিয়ে শহর জুড়ে মিছিল হয়। এ দিন বাইক নিয়েও মিছিল করা হয়। সেই বাইক মিছিলে অধিকাংশ বাইক চালক, আরোহী কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। জানা গিয়েছে, মিছিলে ডিজে বক্স বাজানোর ঘটনায় ছবি সংগ্রহ করেছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ডিজে বক্সের মালিকের খোঁজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। মিছিল ঘিরে যাতে কোনও উত্তেজনা না ছড়ায় তার জন্য শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড-সহ সব রাস্তাতেই পুলিশের পাহারা ছিল। রাস্তায় ছিলেন পুলিশ কর্তারাও। তাঁদের সামনেই অবাধে বাজল ডিজে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি, সেটাই প্রশ্ন।
এবং ভোজ
কোথাও খিচুড়ি-তরকারি, কোথাও আবার তার সঙ্গে সামান্য ফল৷ কোথাও আবার শুধুই নকুলদানা৷ রামনবমীর মিছিলে যোগ দেওয়া মানুষদের জন্য এমনি খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হল জলপাইগুড়িতে৷ এদিন বিজেপির উদ্যোগে মূল মিছিলটি হয় জলপাইগুড়ি শহরে৷ মিছিল কংগ্রেস পাড়ায় শেষ হতে সবার জন্য ব্যবস্থা করা হয় খিচুড়ি ও তরকারির৷ ময়নাগুড়িতে তৃণমূলের মিছিলের শেষে ছিল প্রসাদি বোঁদে এবং নকুলদানা। তিন হাজার লোক খেতে পারে এমন ভাবে খিচুড়ি রান্না হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের শোভাগঞ্জে। খিচুড়িতে দেওয়া হয় আলু, ফুলকপি, গাজরও। মিছিলে হাঁটা রথীন দাসের কথায়, ‘‘খিচুড়ি খাওয়াও হলো সঙ্গে আলু-সহ অন্য আনাজ থাকায় লাবড়ার স্বাদও পেলাম।’’ খিচুড়িতে আলু-পটল মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল মালদহেও। প্রায় ১৫ হাজার লোকের জন্য রান্না হয় সেখানে। বাঁধাকপি, আলু, বেগুন মেশানো খিচুড়ি খেতে দেখা গিয়েছে বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি নির্মল দাম, দলের রাজ্য নেতা যশোদীপ ভৌমিক সহ জেলা নেতাদের অনেককেই। ভোজের নিরিখে সবচেয়ে বড় আয়োজন হয়েছিল ইসলামপুরে। প্রায় ৫০ কুইন্টাল খিচুড়ির ব্যবস্থা হয়েছিল। আলু, গাজর, বাঁধাকপি, বেগুন সহ আনাজ কাটা হচ্ছিল শনিবার থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy