তিন রদবদল নিয়ে জল্পনা। —ফাইল ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের আবহেই আলিমুদ্দিন ব্যস্ত বদলের আলোচনায়। পঞ্চায়েত ভোটের পর সিপিএমের তিন নেতাকে তাঁদের পদ ছাড়তে হতে পারে। তিন জনই রাজ্য দলে গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের মধ্যে দু’জন জেলা সম্পাদক এবং একজন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য।
তিন জনের ক্ষেত্রেই দলের গঠনতন্ত্রের একটি মৌলিক বিধির ‘সংঘাত’ হচ্ছে বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে দলের অনেকেই কৌতূহলী এই নিয়ে যে, পঞ্চায়েত ভোটের পর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কি গঠনতান্ত্রিক সংঘাতের অবসান ঘটাবে? নাকি পরিবর্তিত পরিস্থিতির ‘আপ্তবাক্য’ আউড়ে ‘সংঘাত’কে ‘ব্যতিক্রমী’ আখ্যা দিয়ে বয়ে নিয়ে যাবে?
যে তিন জনকে নিয়ে আলোচনা, তাঁরা হলেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ি, নদিয়ার জেলা সম্পাদক সুমিত দে এবং আদিবাসী নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম। যিনি সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। তিন জনই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও তাঁরা রয়েছেন। আবার জেলা স্তরেও নেতৃত্বে রয়েছেন।
সিপিএমের কাঠামো পঞ্জিকায় লেখা রয়েছে, কেউ একসঙ্গে সংগঠনের তিনটি স্তরে থাকতে পারবেন না। ২০২২ সালের এপ্রিলে কেরলের কান্নুরে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানেই শমীক, সুমিত এবং দেবলীনা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন। তার আগে তাঁরা জেলা ও রাজ্য সম্মেলন থেকে সংশ্লিষ্ট স্তরে নির্বাচিত হন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের কারণেই জেলা সম্পাদক বদল বা জেলা স্তর ছাড়ার বিষয়টি হয়নি। ভোট মিটলে নাড়াচাড়া হওয়ার সম্ভাবনা।’’
তিন জনকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্বভাবতই এই কৌতূহলও তৈরি হয়েছে যে, জেলা সম্পাদক বদল হলে কারা হবেন নতুন মুখ? দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শমীকের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে? নদিয়াতেই বা সুমিতের জায়গায় কাকে আনা হবে?
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে সিপিএমের মধ্যে থেকে দু’টি বিষয় উঠে আসছে। এক, শমীককে সরালে কাকে জেলা সম্পাদক করা হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে ঐকমত্য নেই। একটি অংশ চাইছে, রাজ্য কমিটির সদস্য রাহুল ঘোষকে শমীকের জায়গায় বসাতে। তাতে আবার একটি বড় অংশের আপত্তি রয়েছে বলেই খবর। আর একটি অংশ আবার বলছে, সুন্দরবন যতদিন না পৃথক জেলা হিসাবে প্রশাসনিক ভাবে সিলমোহর পাচ্ছে, ততদিন শমীককেই ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে জেলা সম্পাদক পদে রেখে দেওয়া হোক। জেলা ভাঙলে তখন দেখা যাবে।
নদিয়ার ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাসের নাম। গরিষ্ঠ অংশ প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ অলকেশকে নিয়ে আলোচনা করলেও কোনও কোনও মহলে এসএম সাদির নামও আলোচিত হচ্ছে। যদিও সাদির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়, তিনি রাজ্য কমিটির সদস্য নন। বয়সের বিষয়টিও রয়েছে। ফলে মতুয়া ও মুসলিম অধ্যুষিত নদিয়ায় কাকে জেলা সম্পাদক করা হবে তা যে খুব স্পষ্ট, তেমন নয়। তবে অলকেশ দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে বলেই অভিমত দলের অনেকের। তবে শেষ পর্যন্ত এই বদল কার্যকর হবে কি না, সে প্রশ্নও রয়েছে।
গত পার্টি কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোয় আদিবাসী, দলিত অংশের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। বাংলার দেবলীনাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়ার পাশাপাশি প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমকেও পলিটব্যুরোয় জায়গা দিয়েছিল একে গোপালন ভবন। সমালোচকদের অনেকের মতে, প্রায় ৬০ বছর ছুঁতে চলা একটা কমিউনিস্ট পার্টি এতদিন পর তাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণের জায়গায় অনগ্রসর শ্রেণির এক জনকে ঠাঁই দিচ্ছে, এটাই আশ্চর্যের! এতদিন কেন দেওয়া হয়নি, সেটাই প্রশ্ন। তবে দেবলীনা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলী ছাড়বেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে।
দেবলীনার প্রসঙ্গে সিপিএমের অনেকের মনে পড়ছে হুগলির প্রবীণ নেত্রী মিতালি কুমারের কথা। মিতালিও একবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু জেলায় কাজ করবেন বলে দলের সর্বভারতীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। যা সাধারণত দেখা যায় না। সিপিএমের অনেকের মতে, মিতালির ওই সিদ্ধান্ত ‘ব্যতিক্রম’ হয়ে রয়েছে। দেবলীনা তেমন কিছু করবেন কি না, তা-ও কৌতূহলের বৈকি! নাকি দেবলীনার ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রমী’ শংসাপত্র দেবে পলিটব্যুরো? অর্থাৎ তিনি তিনটি স্তরেই থাকতে পারবেন।
২০১১ সালে সিপিএম বাংলার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর যখন দলের সম্মেলন প্রক্রিয়া হচ্ছে, সেই সময়ে চমক দিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা। সেবার কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকা গৌতম দেবকে জেলা সম্পাদক করা হয়েছিল। যেহেতু গৌতম অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন, তাই তাঁর জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি হয়েছিল পলিটব্যুরোর বিশেষ অনুমতিক্রমে। অনেকের মতে, বরাবর কোন্দলে দীর্ণ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে সেবারও নেপালদেব ভট্টাচার্য, তড়িৎ তোপদার, পলাশ দাস, মানস মুখোপাধ্যায়রা সম্পাদক হওয়ার দাবিদার ছিলেন। যে যাঁর মতো ঘুঁটি সাজানোও শুরু করেছিলেন। বিবাদ এড়াতেই গৌতমকে সে বার জেলা সম্পাদক করা হয়েছিল। তবে শমীক, সুমিত বা দেবলীনাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো। কারণ, তাঁরা আগে জেলা ও রাজ্যের নেতৃত্বে ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সিপিএমের অনেকের অবশ্য বক্তব্য, এবার তিনটি ক্ষেত্রেই যদি ‘ব্যতিক্রম’ বলা হয় তা হলে তা আর ব্যতিক্রম থাকবে না। ‘নিয়ম’ হয়ে যাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy