শরদ পওয়ার এবং অজিত পওয়ার। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দু’মাসেই বদলে গেল পরিস্থিতি। গত ২ মে মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্টে তাঁর রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত যশবন্ত রাও চহ্বাণের নামাঙ্কিত প্রেক্ষাগৃহে এনসিপির বৈঠকে নাটকীয় ভাবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সে দিন দলের সাংসদ, বিধায়ক, পদাধিকারিরা একযোগে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য শরদ পওয়ারের কাছে অনুনয় শুরু করেছিলেন। বুধবার সেই নেতাদেরই একাংশ ১৮ কিলোমিটার দূরে বান্দ্রার এমইটি কলেজ অডিটোরিয়ামে সম্মেলন করে শরদকে দলের সভাপতি পদ থেকে সরানোর কথা ঘোষণা করলেন।
শরদের স্থানে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি পদে তাঁরই ‘বিদ্রোহী’ ভাইপো অজিত পওয়ারকে নির্বাচিত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বান্দ্রার সম্মেলনে। ঘটনাচক্রে, অজিত শিবিরের নেতা ছগন ভুজবল, প্রফুল্ল পটেল, দিলীপ পাতিল, সুনীল তটকরেদের ওই ঘোষণার সময় শরদ ছিলেন সেই সেই যশবন্ত রাও চহ্বাণ সেন্টারেই। তাঁর অনুগামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন ‘লড়াই’ শুরু করার কথা ঘোষণা করে বলেছেন, ‘‘আমাদের হাত থেকে এনসিপির প্রতীক কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’’ কিন্তু বুধবার তাঁর ম়ঞ্চে দেখা গেল এনসিপির মাত্র ১৩ বিধায়ককে। অন্য দিকে, অজিত শিবিরের দাবি, বান্দ্রায় তাঁদের বৈঠকে দলে ৪০ জন বিধায়ক হাজির ছিলেন। গত রবিবার অজিত-সহ ন’জন এনসিপি বিধায়ক মহারাষ্ট্রের শিন্ডেসেনা-বিজেপি জোট সরকারের মন্ত্রিপদে শপথ নিয়েছিলেন। অজিত বুধবার বলেন, ‘‘সরকারে যোগ দেওয়ার দু’দিন আগেই এনসিপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি আমি।’’
শরদের বৈঠক শুরুর ঘন্টা খানেক পরেই শুরু হয়েছিল অজিত শিবিরের সম্মেলন। সেখানে হাজির বিধায়কদের রীতিমতো ১০০ টাকার ‘স্ট্যাম্প পেপার’-এর হলফনামায় সই করিয়ে সমর্থনের অঙ্গীকার করতে হচ্ছিল। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ সম্মেলনের মঞ্চে আরও কিছু বিধায়ককে নিয়ে পৌঁছলেন অজিত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যুযুধান দুই গোষ্ঠীর অধিবেশনের মঞ্চেই ‘হাজির ছিলেন শরদ’। ছবিতে এবং স্লোগানে। যশবন্ত রাও চহ্বাণ সেন্টারের মঞ্চে ছিল এক মাত্র তাঁরই ছবি। অন্য দিকে, অজিত গোষ্ঠীর মঞ্চেও সবচেয়ে বড় ছবি ছিল শরদেরই। তার পর অপেক্ষাকৃত ছোট অবয়বে অজিত, প্রফুল্ল পটেল, ছগন ভুজবল এবং সুনীল তটকরে। অজিত শিবিরের অন্য মন্ত্রী এবং কয়েক জন বিধায়কের সারিবদ্ধ মুখের ছবিও দেখা গিয়েছে মঞ্চে।
শরদের নামে জয়ধ্বনি করে মন্ত্রী ছগন বলেন, ‘‘শরদজি আমাদের গুরু। তাই আমরা গুরুদক্ষিণা দিয়েছি। ওঁর ভাইপোকে উপমুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছি।’’ কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মঞ্চে অজিতের অনুগামীরা সর্বসম্মত ভাবে তাঁকে দলের সভাপতি মনোনীত করেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কোনও মঞ্চেই ছিল না শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলের ছবি! গত ২৮ জুন মুম্বইয়ে এনসিপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের মঞ্চে শরদের পাশাপাশি, দলের দুই সদ্য নিযুক্ত কার্যনির্বাহী সভাপতি সুপ্রিয়া সুলে এবং প্রফুল্ল পটেলের ছবি ছিল। কিন্তু বাদ পড়েছিলেন অজিত। গত সপ্তাহের ওই ঘটনাই এনসিপি এবং পওয়ার পরিবারের অন্দরের ফাটল আরও চওড়া করে বলে দলের একটি সূত্রের খবর। বারামতীর সাংসদ সুপ্রিয়াকে অবশ্য বুধবার শরদ-গোষ্ঠীর বৈঠকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে শরদের নাতি তথা এনসিপি বিধায়ক রোহিত পওয়ারকেও দেখা গিয়েছে আয়োজকের ভূমিকায়।
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এনসিপির বিধায়ক সংখ্যা ৫৩। দলত্যাগবিরোধী আইন এড়াতে অজিত গোষ্ঠীর প্রয়োজন ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন। তা এখনও তাঁদের রয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। শরদ গোষ্ঠীর অভিযোগ, ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে বিধায়কদের বন্দি বানিয়েছে অজিত শিবির। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার রাতে অজিতকে ছেড়ে শরদ শিবিরে ফিরে আসা দুই এনসিপি বিধায়ক কিরেন লহমাটে এবং অশোক পওয়ারও বুধবার ‘চাপ তৈরির’ অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার এনসিপির পতাকা এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’-র অধিকার দাবি করে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে অজিত গোষ্ঠী। ভাইপোর এমন পদক্ষেপের সম্ভাবনা আগেই আঁচ করেছিলেন কুশলী মরাঠা রাজনীতিক শরদ। মঙ্গলবার সকালেই নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি হলফনামা দিয়ে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছে তাঁর শিবির। তাঁদের না জানিয়ে অজিত গোষ্ঠীকে যাতে একতরফা ভাবে এনসিপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’ দেওয়া না হয়, সে জন্যই কমিশনে হলফনামা দেওয়া হয়। অন্য দিকে, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে মঙ্গলবার এনসিপির ভাঙন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর রয়েছে, পুরোটাই শরদ পওয়ারের নাটক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy