নাসির সিকদার
কী তাঁর নাম, নিজেও মনে করতে পারতেন না। এক মুখ দাড়ি-গোঁফের যুবকটি রাস্তাতেই পড়ে থাকতেন। শেষে গ্রামের একটি পরিবার আশ্রয় দেয় তাঁকে। পরিচর্যায় ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে ওঠেন নাসির সিকদার। নিজের ধর্ম পরিচয়ও জানান তিনি। কিন্তু আশ্রয়দাতা হিন্দু পরিবারটি তাঁকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। বরং তাঁদেরই এক জন হয়ে রয়ে গিয়েছেন সাত বছর ধরে।
হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের চেষ্টায় সম্প্রতি তাঁর বাড়ির ঠিকানা মিলেছে। বাংলাদেশের ঢাকার নবাবগঞ্জের সেই বাড়িতে রয়েছেন নাসিরের বাবা-মা এবং দাদারা। কীভাবে এখন তিনি বাড়িতে ফিরবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না সাগরের কৃষ্ণনগর গ্রাম। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে বাড়ি ফেরানো হবে ওই যুবককে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ২০১৩ সালের এক সকালে কৃষ্ণনগর গ্রামে রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল নাসিরকে। কয়েক জন তাঁকে খাবার কিনে খাওয়াতেন। তাঁদেরই এক জন বিশু নামের এক তরুণ। তিনি সেলুনে নিয়ে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটিয়ে দেন। কর্মসূত্রে বিশু এখন দেশের বাইরে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নাসিরের মাথায় চোট ছিল তখন। বিশু বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। পরে গ্রামেরই বাসিন্দা অরবিন্দ গিরি নাসিরকে নিজের বাড়িতে এনে তোলেন। এক সকালে তিনি জানান, ‘‘তাঁর নাম নাসির সিকদার। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন।’’ কিন্তু বাড়ি কোথায়, তা মনে করতে পারেননি।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য দিবস মণ্ডল কৃষ্ণনগরে সন্ধান পান নাসিরের। রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, নাসিরের সঙ্গে কথা বলার সময় সে বারবার বলে তাঁর পরিচিত অনেকে দুবাইয়ে থাকেন। দুবাইয়ে বাঙালি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ছবি দেখে নাসিরকে চিনতে পারেন বাংলাদেশের কয়েক জন যুবক।
যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশের হ্যাম অপারেটরদের সঙ্গে। তাঁরাই নবাবগঞ্জের বালুরচর গ্রামে নাসিরের বাড়ি খুঁজে পান। ভিডিয়ো কলে নাসিরের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয়। নাসিরের বাবা আফতাব সিকদার জানান, ২০১০-এ ফুটবল মাঠে মাথায় চোট পাওয়ার পরেই মানসিক সমস্যা শুরু হয় নাসিরের। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে চলে যেতেন। একবার বেরিয়ে আর ফেরেননি। কী করে এ দেশে এলেন তা বলতে পারেননি নাসিরও।
নাসিরকে দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নাসির বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরতে পারলে ভাল তো লাগবেই। তবে এখানকার কথা খুব মনে পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy