Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
tourism

Rock Climbing: খালি হাতেই পুরুলিয়ার পাহাড়ে চড়ে নায়ক রাজা

পুরুলিয়ার গজাবুরু পাহাড়ের খাড়াই দেওয়াল বেয়ে শীর্ষে উঠে এই রাজ্যের রক ক্লাইম্বিংয়ে নতুন দিক খুলে দিলেন যাদবপুরের রাজা দাস।

সুরক্ষা-কবচ ছাড়াই গজাবুরু পাহাড়ে চড়ছেন রাজা দাস।

সুরক্ষা-কবচ ছাড়াই গজাবুরু পাহাড়ে চড়ছেন রাজা দাস। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ০৬:৫৩
Share: Save:

উটার ডেড হর্স পয়েন্টের খাড়াই পাথুরে দেওয়াল ধরে ঝুলছেন ইথান হান্ট। কখনও পাথরের খাঁজে আঙুল রেখে পরে উঠছেন, কখনও আবার পাথুরে খাঁজে পা মুড়ে বসে অল্প বিশ্রাম। তবে, সবটাই খালি হাতে। সঙ্গে নেই দড়ি বা ক্যারাবিনার মতো কোনও রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ‘ফ্রি সোলো’ স্টাইলে টম ক্রুজ়ের পাহাড়ে চড়ার এই রোমহর্ষক অংশটিই ‘মিশন ইমপসিবল টু’ সিনেমার অন্যতম ইউএসপি।

অনেকটা ইথানের ধাঁচেই এ বার পুরুলিয়ার গজাবুরু পাহাড়ের খাড়াই দেওয়াল বেয়ে শীর্ষে উঠে এই রাজ্যের রক ক্লাইম্বিংয়ে নতুন দিক খুলে দিলেন যাদবপুরের রাজা দাস। কোনও সুরক্ষা-ব্যবস্থা ছাড়াই, শুধুমাত্র মনোবল আর আত্মবিশ্বাসকে সম্বল করে গত ১৮ মার্চ প্রায় ৩০০ মিটার খাড়াই ওই ‘পথ’ অতিক্রম করেছেন তিনি। সময়ে লেগেছে প্রায় ৪৫ মিনিট। রাজা বলছেন, ‘‘ফ্রি সোলো করতে গেলে আত্মবিশ্বাসটাই আসল। ভুলের কোনও জায়গা নেই এখানে। কারণ, ভুল করলে দ্বিতীয় সুযোগ নেই।’’

পাহাড়ে চড়ার নেশা ছিল আগে থেকেই। তবে ‘ফ্রি সোলো’র (খালি হাতে, কোনও রকম সুরক্ষা-কবচ ছাড়াই পাহাড়ে চড়া) অভিজ্ঞতা ছিল না কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী, বছর ৩৬-এর রাজার। আমেরিকার বিখ্যাত ‘ফ্রি সোলো’ আরোহী অ্যালেক্স হনল্ডের অভিযানের ভিডিয়ো দেখেছেন শুধু। কিন্তু গত জানুয়ারিতে গজাবুরু পাহাড়ে গিয়ে রাজার মনে হয়, এই পথ খালি হাতেই চড়ার চেষ্টা করতে পারেন। সেই মতো দোলের দিন ফের পুরুলিয়া আসেন।

কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? রাজা জানাচ্ছেন, সে দিন ভোরেই অভিযান শুরুর ইচ্ছে থাকলেও বাদ সাধে ঘন কুয়াশা। অবশেষে সকাল পৌনে আটটা নাগাদ গজাবুরুর সামনের দিকের রুট ধরে উপরে চড়তে শুরু করেন তিনি— সম্পূর্ণ একা, খালি হাতে। ‘‘এক বারও মাথায় আনিনি যে, একা উঠছি। প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তবে প্রায় ৭০ শতাংশ রাস্তা উঠে যাওয়ার পরে একটা ফাটলে অনেক আলগা বোল্ডার থাকার জায়গাটা তুলনায় বিপজ্জনক ছিল। তার উপরে ছিল একটি মরা গাছ। সেই অংশটি এড়াতে ডান দিকে কিছুটা সরতে হয়েছিল। সেই পর্বটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল।’’— বলছেন রাজা। অবশেষে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি পৌঁছন গজাবুরুর শীর্ষে। ভিডিয়ো কল করে বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে জানান, কী কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অভিনন্দনের পাশাপাশি তখন জুটেছে স্ত্রীর বকুনি!

রাজার অভিযানের রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত গজাবুরুর পাদদেশে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে দেখেছেন বিশিষ্ট পর্বতারোহী মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু ওকে এক বারের জন্যেও নার্ভাস হতে দেখিনি। শুধু পরামর্শ দিয়েছিলাম, মন:সংযোগটাই আসল, কোনও ভাবেই যেন ওটা নড়ে না যায়। কারণ, তা হলেই মৃত্যু অবধারিত। রাজা নেমে আসার পরে কেক আর আঙুর কেটে উদ্যাপন করি।’’

আর রাজাকে দেখে যদি কোনও নবীন পর্বতারোহী ‘ফ্রি সোলো’র চেষ্টা করতে চান? রাজার পরামর্শ, ‘‘নিজের প্রতি চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। এ ছাড়া যে পথে ফ্রি সোলোর কথা ভাবা হচ্ছে, তা আগে চড়া থাকলে ভাল। এ ছাড়া, ওই রুট নিয়ে পড়াশোনা করে সেটা হাতের তালুর মতো চিনে রাখতে হবে। তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy