গত দুর্গাপুজোয় বিতর্কের মধ্যে দিয়েই প্রচারে এসেছিল হিন্দু মহাসভা। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বা কলকাতায় হিন্দু মহাসভা নামের কোনও সংগঠন যে আদৌ সক্রিয়, তা গত বছরের শারদীয়া উৎসবের আগে জানা ছিল না অনেকের। দক্ষিণ কলকাতার রুবি মোড়ের কাছে হিন্দু মহাসভার পুজোয় অসুরকে গান্ধীজির আদলে বানানো হয়েছি। মাথাজোড়া টাক। গোল চশমার সেই অসুর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। শেষে কলকাতা পুলিশ সেই অসুরের মাথায় চুল, নাকের নীচে গোঁফ লাগিয়ে তার চেহারা বদলায়।
এ বার সেই দুর্গাপুজোয় নতুন থিম। গান্ধীজিকে অপমানের রাস্তা থেকে সরে এ বার বিজেপিকে ‘চাপে’ ফেলার পরিকল্পনা হিন্দু মহাসভার। এখনও কেন ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ) কার্যকর হচ্ছে না, সেই দাবি তুলে হিন্দু মহাসভার মণ্ডপে এ বার উমা আসবেন ‘মতুয়া মা’ রূপে।
কেন মতুয়া মা রূপে দুর্গা? হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা চাই না, যে ভারতের নাগরিকদের কাগজ দেখিয়ে নাগরিকত্ব পেতে হবে। এখানে মতুয়া প্রতীকী। আসলে আমরা বলতে চাই সনাতনীরা সকলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী। তাঁদের অবিলম্বে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে উদ্যোগী হোক ভারত সরকার।’’
প্রসঙ্গত, সিএএ চালু করা নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের দাবি অনেক দিনের। বিজেপির ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত ঠাকুরনগরের মানুষেরা বারে বারে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় এসে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার পরেই সিএএ কার্যকর হবে। কিন্তু তা হয়নি। পরের লোকসভা নির্বাচন এসে গিয়েছে। কিন্তু ওই আইন কার্যকর হয়নি। তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই অনেক ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব শাহের সঙ্গেও কথাও বলেন। কয়েক দিন আগেই ঠাকুরনগরে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নতুন করে আশ্বাস দিয়ে এসেছেন, খুব তাড়াতাড়ি সিএএ কার্যকর হবে।
এমনই এক পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে উস্কে দিতে চাইছে হিন্দু মহাসভা। যদিও চন্দ্রচূড় এর মধ্যে ‘রাজনীতি’ মেশাতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রকৃত সনাতনীদের পক্ষে। তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখার বিরুদ্ধে।’’ পাশাপাশিই তিনি ‘প্রকৃত সনাতনী’ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের চোখে ভারতকে যাঁরা নিজের দেশ বলে মনে করেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, তিনিই প্রকৃত সনাতনী।’’
আপাতত কুমোরটুলিতে চলছে ‘মতুয়া মা’ তৈরির কাজ। তবে এর বেশি কোনও তথ্য দিতে রাজি নয় হিন্দু মহাসভা। গত বছরের বিতর্কের পরে শিল্পীরাই আপাতত নাম-পরিচয় গোপন রাখার আর্জি জানিয়েছেন বলে চন্দ্রচূড়ের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘মোট চারটি প্রতিমা থাকবে মণ্ডপে। একটিতে দেখা যাবে রামচন্দ্রের অকালবোধন। এ ছাড়াও দুর্গা হয়ে আসবেন দু’জন ‘মতুয়া মা’। নাগরিকত্ব না থাকায় তাঁরা ডিটেনশন ক্যাম্পে রয়েছেন। একটি সাবেকি মূর্তিও থাকবে। সে মূর্তির পুজো হবে।’’ তবে মতুয়ারূপী দুর্গাকে কেমন দেখতে হবে, হাতে কী কী অস্ত্র থাকবে, তা বিস্তারিত এখনই জানাতে নারাজ চন্দ্রচূড়।
হিন্দু মহাসভা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে পুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করেছে। যদিও নতুন পুজো হিসাবে সেই অনুদান মিলবে কি না, তা নিয়ে খুব নিশ্চিত নন চন্দ্রচূড়। তবে শাসকদলের সঙ্গে চন্দ্রচূড়দের সম্পর্ক গত এক বছরে বদলেছে। ২০২২ সালের বিতর্কের পরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারও নাম না করে বলেছিলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর নাম করে গান্ধীজিকে অসুর বানিয়েছেন! কী শাস্তি হওয়া উচিত? জনতাই শাস্তি দেবে। লজ্জার ব্যাপার।’’ কিন্তু গত ২৯ অগস্ট ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে ডাক পেয়ে চন্দ্রচূড় নবান্ন সভাঘরে যান। সেখানে তিনি একাধিক বার মমতাকে ‘মাতৃসমা’ বলে সম্বোধন করেন। পয়লা বৈশাখকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নির্ধারিত করার পক্ষে অভিমত দেওয়ার পাশাপাশি নাম না করে বিজেপিকেও বিঁধে চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে যদি কোনও রাজনৈতিক দল পশ্চিমবঙ্গকে বিভাজন করার চেষ্টা করে, তা হলে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার তরফে কথা দিয়ে গেলাম বুকের প্রতিটি রক্তবিন্দু আমরা সঁপে দেব। আমরা কোনও মূল্যে পশ্চিমবঙ্গকে বা বঙ্গ প্রদেশকে বিভাজিত হতে দিতে চাই না, দেবও না।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে হিন্দু মহাসভার। মমতাকে ‘মাতৃসমা’ বলা নিয়ে কটাক্ষ করায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন চন্দ্রচূড়। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপিকে চাপে রাখতেই কি ‘মতুয়া মা’-এর পুজো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy