ফাইল চিত্র।
অতিমারির জেরে স্কুল বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল হস্টেলও। তবুও বাড়িতে বসে প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে অনলাইনে পড়াশোনা করেছিল রাজ্যের দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এ বার মাধ্যমিকে বেশির ভাগ দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারই সার্বিক ফলাফল ভাল হয়নি। রাজ্যের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বার এ বার ২২০ জন দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে পাশ করেছে ২১০ জন। ১০ জন অকৃতকার্য হয়েছে। তবে পাশ করলেও বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফলাফল আশানুরূপ নয়।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা পরামর্শদাতা বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, তাঁদের প্রতি বছরই মাধ্যমিকে ফলাফল খুব ভাল হয়। সবাই তো পাশ করেই, বেশির ভাগ পড়ুয়াই ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পায়। এমনকি, কিছু পড়ুয়া ৯০ শতাংশ নম্বরও পায়। এ বার দীপ মণ্ডল নামে এক জন পড়ুয়াই ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। মোট ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ‘এ’ গ্রেড বা ৬০ শতাংশ পেয়েছে ৬ জন। বাকি ১০ জন ‘বি প্লাস’ বা ৬০ শতাংশের কম পেয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এত খারাপ ফলাফল সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি। আমরা কয়েক জন পড়ুয়ার ফলাফল রিভিউয়ের আবেদন করব।’’ লাইট হাউজ় ফর ব্লাইন্ড-এর অধ্যক্ষ অমিয়কুমার শতপথী জানান, তাঁদের স্কুলে ১৪ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে আলেয়া খাতুন নামে এক জন ৬০ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছে।
নরেন্দ্রপুরের পড়ুয়া দীপ বলছে, “বিজ্ঞান বিষয়ক পড়াশোনা শিক্ষকেরা বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে বোঝান। অনলাইনে তা সম্ভব হয়নি। ভূগোলের ম্যাপ বোঝাও অনলাইনে সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে অনলাইনে পড়াশোনার জন্য এ বার পরীক্ষার প্রস্তুতিটাই ভাল হয়নি।” বিশ্বজিৎবাবুরও ব্যাখ্যা, দৃষ্টিহীনদের জন্য স্কুলে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি খুব জরুরি। আবাসিক স্কুলে হস্টেল বন্ধ হওয়ায় পড়ুয়াদের বাড়ি চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু দৃষ্টিহীনদের পক্ষে স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে অনলাইন ক্লাস করা কঠিন। কারণ, দৃষ্টিহীনেরা মূলত ব্রেল-এ পড়াশোনা করে। তিনি বলেন, “দৃষ্টিহীনদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক পড়াশোনা খুবই কঠিন। অনলাইনে সাধারণ পড়ুয়ারাই অঙ্কের মতো বিষয় বুঝতে হিমশিম খেয়েছে। সেখানে দৃষ্টিহীনদের কাছে বিষয়টি আরও সমস্যার।’’ তিনি জানান, স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু হলে ফের ব্রেল-এ পড়াশোনা শুরু করতে হবে। অমিয়বাবুও বলেন, “দৃষ্টিহীনদের পড়াশোনা করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ভাল রাইটার না পেলে পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। তার উপরে অতিমারি পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy