মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে নিজেই টোটো চালিয়ে বাড়ির পথে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মাধ্যমিক শুরু হতে ঘণ্টাখানেক বাকি। রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলে এসে পৌঁছল টোটো। চালক-সহ সব আরোহীর পোশাক এক। আকাশি জামা ও নীল প্যান্ট পরে টোটো থেকে নেমে এল আট জন। এক সঙ্গে ঢুকে গেল পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষা শেষেও এক সঙ্গে ওই টোটোতে ফিরে যায়। চালক ওই পরীক্ষার্থীদেরই এক জন। নাম মহম্মদ মাসুদ হোসেন ওরফে রাজা। টোটো চালিয়ে নিজে পড়ছে, ভাইকেও পড়াচ্ছে মাড়গ্রাম হাইস্কুলের এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
মাড়গ্রামের এঁটলাপাড়ার মাসুদের বাড়িতে থাকেন বাবা, মা দাদু, ঠাকুমা এবং এক ভাই মিলে ছ’জন। মাসুদের বাবা রফিউল ইসলাম বছর পাঁচেক আগে ৬০ হাজার টাকা ঋণ করে টোটো কিনেছিলেন। কিন্তু বছর দেড়েক আগে মৃগী হওয়ার পর থেকেই ভারী কোনও কাজ করতে পারেন না। সংসার চালানো, ছেলেদের পড়াশোনার জন্য খরচ থেকে টোটোর ঋণশোধ কোথা থেকে হবে— সেই চিন্তায় ঘুম ছুটে গিয়েছিল রফিউলের। তখনই টোটো চালানো শিখে সংসারের হাল ধরতে হয় কিশোর মাসুদকে।
রফিউল বলেন, ‘‘ভারী কাজ করতে পারি না। ভাগ্যিস রাজা টোটো চালানো শিখল। না হলে ওকে রাজমিস্ত্রি বা অন্য কাজের জন্য বাইরে খাটতে যেতে হত। এখন অন্তত পড়াশোনার সঙ্গে গ্রামে বসে আয় করতে পারছে।’’
আরও পড়ুন: কর্মস্থলে যুবকের মৃত্যুতে প্রশ্ন, কফিনে ফিরল দেহ
মাসুদ অবশ্য পড়ার ইচ্ছে কখনওই ছাড়েনি। মাধ্যমিকে ভাল ফলের জন্য তাই বিজ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজির টিউশনও নিয়েছে। সেই টাকাও জোগাড় করেছে টোটো চালিয়ে। সামান্য জমিজমা রয়েছে তাদের। সেই সঙ্গে তার প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা টোটো চালানোর রোজগারেই চলে ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ। মাধ্যমিকের সময় গ্রামের সাত পরীক্ষার্থীকে তার টোটোতেই পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসছে মাসুদ। মাড়গ্রাম থেকে জয়কৃষ্ণপুর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার প্রতিদিন আসা যাওয়া জন্য ওই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য কিছু ভাড়া নিচ্ছে। মাসুদের কথায়, ‘‘বাড়িতে এত জন আছে। তাদের জন্য কিছু তো করতে হবে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি টোটো চালাই।’’
মাধ্যমিক শেষ হলেও তার জীবনের পরীক্ষা যে শেষ নয়, তা জানে মাসুদ। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ। উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে পড়াশোনা করতে চায় মাসুদ। তার কথায়, ‘‘পড়তে তো হবেই। আর একটা টোটো কিনে ভাড়া দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও টাকা কোথায়? আমাকেই আরও বেশি আয় করতে হবে। যদি তাতে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়, তা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy