ঘরের বাইরে সপরিবারে বাবুসোনা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
এটাকে কি ঘর বলে নাকি! বাঁশ-ত্রিপলের একটা কুঁড়ে। কোনও মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেটাকেই চারদিক দিয়ে দড়ির বাঁধন দিচ্ছেন মাঝবয়সি মানুষটা। মাঝে মাঝে সেই ত্রিপলের ঘেরাটোপ থেকে মুখ বাড়াচ্ছে বছর চারেকের একটি ছেলে।
ঘোড়ামারা দ্বীপের বাবুসোনা মণ্ডল ফাঁকে এক বার আকাশটাও দেখে নিলেন। ক্রমেই ঘনাচ্ছে দুর্যোগের মেঘ। চোখ নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রায় স্বগতোক্তিই করলেন তিনি, “এ বারে যে কী হবে, কে জানে!”
পাঁচ বার ভিটে হারিয়েছেন। বছর কয়েক আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ভিটে হারানোর পরে বাঁধের কাছে রাস্তার ধারে বাঁশ-ত্রিপল দিয়ে কুঁড়ে বানিয়ে কোনও রকমে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছেন বাবুসোনা। ডেনার ধাক্কা সেই ঘর সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েই এখন চিন্তায় তিনি। বলছিলেন, “বার পাঁচেক ভিটে হারিয়েছি। এখন এই কুঁড়েঘরটাই সম্বল। নদী তো ফের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। তার মধ্যেই আবার ঝড় আসছে। তেমন ঝড় হলে তো কিছুতেই সামলানো যাবে না।”
পঞ্চায়েতে অস্থায়ী সাফাই কর্মীর কাজ করেন বছর চল্লিশের বাবুসোনা। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ে অষ্টমে। ছেলের সবে বছর চারেক। ঘর হারানোর কথা উঠতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন বাবুসোনা। তিনি তো বটেই, তাঁর স্ত্রীও ভুলতে পারেননি বছর পনেরো আগের আয়লার স্মৃতি। সে বারে ঘূর্ণিঝড়ের আগের রাতে ত্রাণ শিবিরে না গিয়ে ঘরে ছিলেন বাবুসোনা। কিন্তু নদী উত্তাল হয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসছে দেখে স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে রাতেই এলাকার এক স্কুল বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তিনি। ঝড় থামলে ফিরে এসে দেখেন, ভিটেমাটি সব নদীর গর্ভে। তাঁর বাড়ি ছাড়িয়ে অন্তত কুড়ি মিটার এগিয়ে এসেছে নদী।
তার পর থেকে গিলে খেতে আসা বটতলা নদীর সঙ্গে অসম লড়াই চালিয়েছেন বাবুসোনা। একের পর এক দুর্যোগ তাঁকে সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছে। নতুন করে ঘর বেঁধেছেন, তা আবারও তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে। কটালের জলোচ্ছ্বাসেও ভিটে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত চুনপুরী পাত্র পাড়ায় নদীর পাড়ে সরকারি রাস্তার ধারে ত্রিপল ঘেরা কুঁড়েঘরটি বানান। কিন্তু কবে আবার ভিটে হারাতে হয়, সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাঁর। বাবুসোনার কথায়, “ক’দিন পরে কী হবে, জানি না। ধার-দেনা করে মেয়েদের পড়াচ্ছি। তা-ও চালাতে পারব কি না, জানি না। এখন এই ঝড়ের আতঙ্কে তো মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।”
সাগরের নদী-সমুদ্রে ঘেরা এই ঘোড়ামারা দ্বীপ দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙনে বিপর্যস্ত। ভাঙনের কবলে তলিয়ে গিয়েছে এই দ্বীপের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, বাগপাড়া, বৈষ্ণবপাড়া, খাসিমারার একাংশ। ক্রমশ কমেছে দ্বীপের জনসংখ্যা। বর্তমানে আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটে দ্বীপের হাজার পাঁচেক মানুষের। দুর্যোগের পূর্বাভাসে সেই আতঙ্ক কয়েক গুণ বাড়ে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, “ভাঙনে বিপর্যন্ত মানুষের পুনর্বাসনে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy