Advertisement
E-Paper

কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বা মাস্টার, রিক চায় বোকা হতে! কারণ জানতে পারলে থমকে যেতে হয়

তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসঘরে স্যর জানতে চেয়েছিলেন, কী হতে চাও বড় হয়ে? সবার শেষে মুখ খুলল রিক। রিক বাগদি। অদ্ভুত মায়াভরা এক হাসি নিয়ে সে বলে উঠল, ‘‘আমি বোকা হতে চাই।’’

রিক বাগদি।

রিক বাগদি। Sourced by the ABP

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪১
Share
Save

মাস্টারমশাই নির্ঘাত জানতেন না, তাঁর ক্লাসঘরে রোদ্দুর লুকোনো ছিল।

কে-ই বা রোদ্দুর হতে চায় আজকাল? লাভপুরের শীতলগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা একে একে বলে যাচ্ছিল, ওরা কেউ ডাক্তার হতে চায়। কেউ মাস্টার। কারও আবার পুলিশ, সিআইডি অফিসার হওয়ার ইচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসঘরে স্যর জানতে চেয়েছিলেন, কী হতে চাও বড় হয়ে? সবার শেষে মুখ খুলল রিক। রিক বাগদি। অদ্ভুত মায়াভরা এক হাসি নিয়ে সে বলে উঠল, ‘‘আমি বোকা হতে চাই।’’

মাস্টারমশাই অবাক। বললেন, ‘‘বোকা হলে তো তোমাকে সবাই ঠকিয়ে নেবে!’’ রিক হাসতেই থাকে। উত্তর দেয়, ‘‘ঠকিয়ে নেয় তো নেবে! বোকা হলে আমি তো কাউকে ঠকিয়ে নিতে পারব না।’’

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছুঁয়ে যাওয়া মাটিতে অমনি রোদ্দুর ঝলমলিয়ে ওঠে। অকাতরে আলো আর ওম বিলোনো রোদ্দুরের মতো রিকের কথাগুলোর ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন স্কুলেরই শিক্ষক রিপনকান্তি বালা। যত মানুষ সেই ভিডিয়ো দেখে, কথাগুলো নাড়িয়ে দেয় তাদেরও। মনে হয়, রোদ্দুর হতে চাওয়া অমলকান্তি হয়তো সবার আগে রিকেরই বন্ধু। ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির ‘দ্য ইডিয়ট’ উপন্যাসের মিশকিনও হয়তো চেনে তাকে। নচিকেতা কি তার জন্যই লেখেন, ‘তবু আমি বোকাই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশন’?

শীতলগ্রামেই বাড়ি ছোট্ট রিকের। বাবা অভিজিৎ বাগদি পেশায় দিনমজুর। মা সুমিন্দা বাড়ি সামলান। দু’জনেই বললেন, ‘‘রিক মাঝেমধ্যে এমন অনেক কথা বলে, যা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।’’ আর রিকের মাস্টারমশাই রিপন জানিয়ে দিচ্ছেন, বোকা হতে চাইলেও রিক পড়াশোনায় মোটেই খারাপ নয়। তবে বরাবরই সে নির্বিরোধী। কারও সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটিতে জড়ায় না। বসার জায়গা থেকে খেলার হারজিত— কোথাওই কোনও প্রতিযোগিতায় সে নেই।

এই ছেলে হবে চালাক! যেখানে আস্ত সময়টাই গান গেয়ে গেয়ে বলে, ‘আমাকে বোকা বোলো না’। বোকা বানানোর বিশ্বদিবস পয়লা এপ্রিলের আগে সেই ছুটন্ত সময়ের চোখেই যেন রাঢ়বঙ্গের ধুলো হয়ে লাগল রিকের কথাগুলো। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ঘোষও রিকের কথা শুনে বিস্মিত। বললেন, ‘‘রিকের কথায় ধরা পড়েছে গভীর জীবনবোধ। ভবিষ্যতে সে এক জন সৎ নাগরিক হবে বলে আশা রাখি।’’ স্কুলের এক অভিভাবক সুমন্ত ঘোষ, সমাজকর্মী তথা লাভপুর সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া একটি ছেলের মুখে এমন ভাবনার কথা কল্পনাই করা যায় না। এমন মনোভাব প্রতিটি মানুষের কাছে কাম্য।’’

কেন রিক, কেন চাও বোকা হতে?

রিক আবার লাজুক হাসে। তার পর বলে, ‘‘বাবাকে বলতে শুনেছি, ‘বোকা পেয়ে সবাই আমাকে ঠকিয়ে নিচ্ছে।’ কিন্তু বাবা কাউকে ঠকিয়েছে, এমনটা শুনিনি। বাবার মতো আমিও কাউকে ঠকাতে চাই না।’’

লোকে যত খুশি বলুক, ‘‘খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা।’’ রবিঠাকুর জানেন, এ ভারী খুশির কথা। ‘‘সেই খুশিতে বিশ্বের অণু পরমাণু থর্‌থর্‌ করে কাঁপছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}