সঞ্জীব বসাক ও তাঁর তৈরি দুই প্রতিমা। অসমের ধুবুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁর পেশায় বিপর্যয়, নেশায় বিপত্তারিণী! পুজো এলেই ধুবুড়ির বিলাসীপাড়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফিল্ড অফিসার সঞ্জীব বসাকের খোঁজ পড়ে। কোনও বিপর্যয় সামলাতে নয়, তাঁর হাতে গড়া অভিনব প্রতিমার সন্ধানে। ফি পুজোয় শিল্প ও নৈপুণ্যে তাক লাগানো সঞ্জীবের প্রতিমায় থাকে সংরক্ষণের বার্তা, উদ্ভাবনের ছোঁয়া।
এ বছরের পুজোয় মাত্র দু’টি মূর্তি গড়ছেন সঞ্জীব। একটি বৈদ্যুতিক বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা তামার তার দিয়ে, অন্যটি পুরনো জামার প্লাস্টিক বোতাম দিয়ে।
ফাইন আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত এবং রাজ্য স্তর এবং জাতীয় স্তরে বহু পুরস্কারে ভূষিত সঞ্জীব বলেন, “ছোট থেকেই ছবি আঁকা ও জিনিস বানানো আমার নেশা। ব্যতিক্রমী এবং অভিনব জিনিস তৈরি করে আমি আনন্দ পাই। এ বছর আমি দেবী দুর্গার দু’টি মূর্তি তৈরি করেছি— একটি ব্যবহৃত শার্টের বোতাম থেকে এবং অন্যটি পুনর্ব্যবহৃত তামার তার থেকে।” তিনি জানান, শুধু শৈল্পিক দক্ষতা তুলে ধরা তাঁর উদ্দেশ্য নয়, ধাতব ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের পরিবেশ-সচেতন প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি।
ব্যবহৃত শার্টের বোতাম থেকে দুর্গার মূর্তি তৈরি করা সহজ কাজ ছিল না। সঞ্জীব স্থানীয় মানুষ, দর্জি এবং আত্মীয়দের থেকেও বোতাম সংগ্রহ শুরু করেছিলেন। বোতামগুলি সংগ্রহ করার পরে সেগুলি পরিষ্কার করা হয় এবং আকার ও রঙ অনুযায়ী আলাদা করা হয়। তার পর পরিবেশ-বান্ধব আঠা ব্যবহার করে বোতাম দিয়ে প্রতিমার বিভিন্ন অংশ তৈরি করতে শুরু করেন সঞ্জীব।
তামার তারের ক্ষেত্রে খাটনি ছিল আরও বেশি। সঞ্জীব পুরনো এবং অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে তামার তার পেতে স্থানীয় স্ক্র্যাপ ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফেলে দেওয়া বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ভাঙা যন্ত্রপাতি এবং শিল্প সরঞ্জাম থেকে সাবধানতার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে তারগুলি সংগ্রহ করেন তিনি। তার জড়ো করার পরে সেগুলোকে জটমুক্ত করে পরিষ্কার করাও ছিল কষ্টসাধ্য কাজ। শৈল্পিক কাঠামো তৈরির জন্য তারগুলিকে পেঁচিয়ে বিভিন্ন আকার দেওয়া হয়েছে। সঞ্জীবের কথায়, “এই গোটা প্রক্রিয়ায় আমি শুধু পরিত্যক্ত সামগ্রীকে শিল্পে রূপান্তরিত করিনি, সেই সঙ্গে ধাতব বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং বিজ্ঞানসম্মত নিষ্কাশনের বার্তাও দিতে চেয়েছি।”
এর আগে দেশলাই কাঠি দিয়ে তৈরি সঞ্জীবের ১২ ফুট লম্বা এবং ১৪ ফুট চওড়া দুর্গামূর্তি, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি গণেশমূর্তি, বিভিন্ন তারে তৈরি ১৬০ কেজির দুর্গামূর্তি বিভিন্ন রেকর্ড বইতে স্থান পেয়েছে। ২০২০ সালে তিনি আত্মনির্ভর ভারত সম্মান এবং রাষ্ট্রীয় প্রেরণা পুরস্কার পান। ২০২১ সালে কমলা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন সঞ্জীব।
পাশাপাশি, ধুবুড়ি জেলারই প্রদীপ কুমার ঘোষ এ বছর ৮ হাজার প্লাস্টিকের বোতলের ছিপি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছেন। জানালেন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্লাস্টিক দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বার্তা দিতেই ছিপি দিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy