রূপালি শবর আর নমিতা শবর
এক জনের পড়া বন্ধ হয়েছিল বিয়ের পরে। বিবাহিত জীবনে পড়াশোনা করা হয়ে উঠছিল না অন্য জনেরও। কিন্তু পড়ার ইচ্ছে মেটেনি পুরুলিয়ার দুই শবর-বধূর। বিয়ের তিন বছর পরে, এক সন্তানের মা ভর্তি হয়েছেন স্কুলে। তাঁর কথা জেনে পড়শি গ্রামের অন্য এক বধূ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এলাকার শবর ছেলেমেয়েদের নিখরচায় পড়ানোর দায়িত্বও নিয়েছেন তাঁরা। ‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিতের কথায়, ‘‘শবর সম্প্রদায়ের মধ্যে যেখানে শিক্ষার হার খুবই কম, সেখানে মানবাজার ১ ব্লকের নমিতা শবর ও রূপালি শবরের এই উদ্যোগের জন্য কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়।’’
বাঁকুড়ার রানিবাঁধের হলুদকানালির নমিতা ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পাশের পরে, অনটনে পড়তে পারেননি। পরের বছর বিয়ে হয় মানবাজারের কাশীডিতে। সংসার সামলে, এক বছরের ছোট মেয়েকে দেখাশোনার মধ্যেও পড়ার ইচ্ছে হারাননি। তাঁর কথায়, ‘‘গত বার দুয়ারে সরকারের শিবিরে এসে বিডিও (মানবাজার ১) মোনাজকুমার পাহাড়ি ফের পড়া শুরু করতে উৎসাহ দেন। স্বামীরও মত ছিল। বিডিও-র সাহায্যে কাশীডি সিআরসিজি বিদ্যাপীঠে কলাবিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হই। এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছি।’’
সে খবর পেয়ে পাশের মাকড়কেন্দি গ্রামের বধূ বছর উনিশের রূপালিও বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রানিবাঁধের মৌলা গ্রামের রূপালি রানিবাঁধ গালর্স হাইস্কুল থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। মে মাসে তাঁর বিয়ে হয়। রূপালি বলেন, ‘‘বিডিও-র উৎসাহে মানবাজারের মানভূম সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছি।’’ বিডিও বলেন, ‘‘করোনা-কালে যাতে শবর ছেলেমেয়েদের পড়ার অভ্যাস নষ্ট না হয়, সে জন্য দুই শবর-বধূকে তাদের পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছি। শিক্ষার সরঞ্জামও দিয়েছি।’’
নমিতা কাশীডি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ২৬ জন শিশুকে এবং রূপালি মাকড়কেন্দি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ২৭ জন শিশুকে সপ্তাহে ছ’দিন সকালে ঘণ্টা দু’য়েক করে পড়াচ্ছেন। দু’জনেরই রোজনামচা, ‘‘খুব ভোরে উঠে সংসারের কাজ সেরে, পড়াতে যাচ্ছি। ফিরে দিনমজুরিতে বেরোই। রাতে পড়তে বসি।’’ উচ্চশিক্ষা শেষ করে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে দু’জনেরই। কাশীডির পড়ুয়া সন্তোষ শবর, মাকড়কেন্দির বিল্টু শবরদের অভিজ্ঞতা, ‘‘নতুন দিদিমণি ভুল করলে বকছে যেমন, আদরও করছে।’’
খেড়িয়া শবর মেয়েদের মধ্যে গত বছর প্রথম কলেজ উত্তীর্ণ পুরুলিয়ার বরাবাজারের রমণিতা শবর বলেন, ‘‘নমিতা ও রূপালির মতো মেয়েরা এগিয়ে এলে, শবরদের শিক্ষার ছবিটাই বদলে যাবে।’’ নমিতার স্বামী চুনারাম শবর, রূপালির স্বামী সন্তু শবরেরা বলেন, ‘‘গ্রামে কেউ মাধ্যমিক পাশ করেননি। ওদের জন্য যদি গ্রামের ছেলেমেয়েগুলো পড়াশোনা শেখে, তা হলে আমাদের মুখও উজ্জ্বল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy