Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলার প্রশ্ন বিভ্রাটে গন্ধ অন্তর্ঘাতেরই

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য চক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন স্নাতক স্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাশ কোর্সের প্রশ্নপত্র-বিভ্রাটের পরে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

এক সপ্তাহে দু’-দু’দিন প্রশ্ন-বিভ্রাটে ক্ষোভ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে অন্তত একটি ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। রবিবার শিক্ষা শিবির সূত্রে জানা গেল, বাংলা অনার্সের (পার্ট টু) চতুর্থ পত্রের প্রশ্ন-বিভ্রাটের ঘটনাটিকে প্রাথমিক ভাবে অন্তর্ঘাত হিসেবেই দেখছেন তদন্তকারীরা।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য চক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন স্নাতক স্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাশ কোর্সের প্রশ্নপত্র-বিভ্রাটের পরে। সেই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট আজ, সোমবার বা কাল, মঙ্গলবার জমা পড়তে পারে।

৫ জুন বাংলা অনার্স (পার্ট টু) চতুর্থ পত্রের পরীক্ষায় তৃতীয় পত্রের প্রশ্ন হাতে পান ছাত্রছাত্রীরা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ওই পত্রের পরীক্ষা বাতিল করে দেন। কেন এই বিভ্রাট, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গড়া হয় রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তীর নেতৃত্বে। এই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন জানান, বিভ্রাট ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানাতেই। ছাপাখানার সুপারকে ডেকে পাঠিয়ে অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন উপাচার্য। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা ১০ দিনের মধ্যে। ১৪ জুন, বুধবার সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই, রবিবার জানা যায়, তদন্তকারীরা এই ঘটনায় অন্তর্ঘাতের সূত্র পেয়েছেন।

বাংলার ওই পরীক্ষার দু’দিন পরে, বৃহস্পতিবার বাঘা যতীন সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (পাশ)-এর পরীক্ষায় প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধের প্রশ্নপত্র মিশে যায়। শিক্ষা সূত্রের খবর, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গাফিলতির সঙ্গে সঙ্গে ওই কলেজের গোটা ব্যবস্থাকেই দায়ী করে রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে তদন্ত কমিটি। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে-ভাবে গা-ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছেন, সেটা শিক্ষামহলের লজ্জা। নিয়মবিধির মধ্যে থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেটা করা যায়, সেটাই করব।’’

ওই দিন প্রথমার্ধে পাশ কোর্সের পড়ুয়াদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল। অনার্সের যে-সব ছাত্রছাত্রী পাশ-বিষয় হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়েছেন, তাঁদের পরীক্ষা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথমার্ধের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়। দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষা ছিল বেলা ২টো থেকে। কিন্তু প্রথমার্ধের পরীক্ষা যখন প্রায় শেষের পথে, তখন সম্মিলনী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা লক্ষ করেন, একই ঘরে এক বেঞ্চে কেউ প্রথমার্ধের প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে পরীক্ষা দিচ্ছেন, কেউ বা দ্বিতীয়ার্ধের প্রশ্নপত্রে! বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি জানানোর পরেই দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:বাড়তি সুবিধা, জিত রাজ্যের

কয়েকটি কলেজের কিছু পরীক্ষার্থী তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখান। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আটকে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী। প্রশ্ন-বিভ্রাটের দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। পরের দিন, শুক্রবার পার্থবাবু ওই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

তদন্তে জানা গিয়েছে, পরীক্ষা পরিচালনার জন্য ওই কলেজের দু’জন শিক্ষক এবং এক শিক্ষিকাকে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রথমার্ধের পরীক্ষা নেওয়া হয় সকাল ১০টা থেকে। কিন্তু সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক কলেজে ছিলেন না। তাঁরা দু’জনেই কলেজে পৌঁছন বেলা ১২টার পরে। কলেজে ছিলেন না অধ্যক্ষ শান্তিরঞ্জন পালচৌধুরীও। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকাই প্রশ্নপত্র বিতরণ করেন। এবং তখনই ভুল হয়। অধিকাংশ ঘরেই প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট একসঙ্গে পাঠান ওই সুপারভাইজার।

তদন্তকারীরা অধ্যক্ষ এবং ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে জানতে চান, দু’জন সুপারভাইজার ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছননি কেন? অধ্যক্ষই বা কেন ছিলেন না? প্রশ্নের প্যাকেট খোলার আগে তার উপরকার লেখা সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজারের নজর এড়িয়ে গেল কী ভাবে?

সদুত্তর মেলেনি। তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তী এই বিষয়ে এ দিন মুখ খুলতে চাননি। তিনি শুধু জানান, চলতি সপ্তাহেই তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy