Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

জট কেন, গলদ কি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই

চাকরি পেয়ে গিয়েছেন ধরে নিয়ে অনেকের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তাঁদের মাথায় হাত! স্কুল স্তরের পঠনপাঠন ঠিকঠাক চালাতে হলে শিক্ষক নিয়োগ একান্তই প্রয়োজন। দীর্ঘ ছ’-সাত বছর নিয়োগ না-হওয়ায় শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে।

স্কুল সার্ভিসের পরীক্ষা দিচ্ছেন চাকরিপার্থীরা। —ফাইল চিত্র

স্কুল সার্ভিসের পরীক্ষা দিচ্ছেন চাকরিপার্থীরা। —ফাইল চিত্র

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৩
Share: Save:

ছ’-সাত বছর কেটে গিয়েছে। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ— সবই হয়েছে। হয়নি শুধু নিয়োগ। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া বারে বারে আটকে যাচ্ছে আইনের জটে। ভুগতে হচ্ছে ৪০ হাজারের বেশি প্রার্থীকে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি প্রক্রিয়াতেই কোনও গলদ থাকছে?

স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সূত্রের খবর, শেষ বার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল ২০১২ সালে। তখন পঞ্চম থেকে দ্বাদশ নিয়োগ হত একই সঙ্গে। পরে বিষয়টি ভাগ হয়ে যায়। উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষা টেট-এর বিজ্ঞপ্তি বেরোয় ২০১৪ সালে। ২০১৫-য় পরীক্ষার পরে মামলা হয়। জট কাটিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফলপ্রকাশের পরে জারি হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। প্রক্রিয়াও শুরু হয়। কিন্তু শূন্য পদের যে-দশ শতাংশ সংরক্ষিত, তার আওতায় কারা থাকতে পারবেন, তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং ফের বিষয়টি আদালতে গড়ায়। কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দেয়, সংরক্ষিত আসন ছাড়া বাকি অংশে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই অনুযায়ী ৬ জুলাই তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি। কিন্তু নথি যাচাইয়ের পর্ব মেটেনি!

নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই সমস্যা হয়। কর্মরত শিক্ষকেরা জানান, তাঁরা বদলির জন্য পরীক্ষায় বসতে চান। কিন্তু কমিশন জানায়, বদলি নীতি চালু থাকায় তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। কেননা সে-ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন নতুন প্রার্থীরা। আদালতের দ্বারস্থ হন কর্মরত শিক্ষকেরা। কমিশনের এক কর্তা জানান, ওই শিক্ষকেরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন বলে জানিয়েছে আদালত। কিন্তু মামলার ফয়সালার আগে নিয়োগ করা যাবে না। তার পরে লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৬-র ২৭ নভেম্বর। ফল বেরোয় গত মার্চে।

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে পরীক্ষা হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। ফল বেরোয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। একই ভাবে মামলায় জড়ায় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির স্তরের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। পরে আদালতের কিছুটা ছাড় পেয়ে ওই স্তরে কাউন্সেলিং শুরু হয়। কিন্তু মেধা-তালিকা প্রকাশ না-করায় ফের মামলা হয়। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, মেধা-তালিকা প্রকাশের আগে নিয়োগ করা যাবে না। কমিশনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘আইনি জট থেকে প্রায় মুক্ত হয়েছি। নিয়োগ দ্রুতই হবে।’’

চাকরি পেয়ে গিয়েছেন ধরে নিয়ে অনেকের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তাঁদের মাথায় হাত! স্কুল স্তরের পঠনপাঠন ঠিকঠাক চালাতে হলে শিক্ষক নিয়োগ একান্তই প্রয়োজন। দীর্ঘ ছ’-সাত বছর নিয়োগ না-হওয়ায় শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে।

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাম আমলে মামলায় সার্বিক ভাবে কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকেছে বলে জানি না। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে পরপর মামলা হচ্ছে নিয়োগকে ঘিরে। আসলে প্রক্রিয়াতেই ত্রুটি। সরকারের সদিচ্ছা নেই। সুকৌশলে নিয়মের মধ্যে বিভ্রান্তি রাখা হয়। তাই এত মামলার সুযোগ মেলে।’’ সরকার অবশ্য মামলার পথ থেকে সরে আসার কথা বলেছে বারবার। এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

SSC Recruitment Calcutta High Court Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy