যাত্রা: কোচবিহার শহরে কলেজ ময়দান থেকে মদনমোহন মন্দিরে যাওয়ার পথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পরেশচন্দ্র অধিকারী, উদয়ন গুহ এবং আব্দুল জলিল আহমেদ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
কয়েকশো মিটার দুরেই কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশ। তাঁর অদূরেই তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন সন্ধে নেমেছে। দিনহাটা পেরিয়ে অভিষেকের গাড়ি ঢুকেছে সীমান্ত পথে। রাস্তার দু’ধারে কাতারে কাতারে লোক দাঁড়িয়ে। কেউ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিষেকের জয়ধ্বনি দিচ্ছে। কেউ মেতে উঠেছে সবুজ আবিরে। আর কাঁটাতার ঘেঁষে রাইফেল উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে বিএসএফ জওয়ানেরা। অভিষেক সকলের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন। বিরোধীরা দাবি করেছেন, ‘‘এ সব লোক দিনমজুরি দিয়ে নিয়ে আসা। না হলে অভিষেককে দেখতে কোনও মানুষই যেতেন না।’’ তাঁবুতে যা শুনে মৃদু হাসেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘এমন কর্মসূচি কেউ আগে কখনও করেনি। কেউ এমন কর্মসূচি করুক, তার পরে বাকি কথা শোনা যাবে।’’
সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ হেলিকপ্টারে কোচবিহারে পৌঁছন অভিষেক। এবিএনশীল কলেজের মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নেমে তিনি হেঁটে মদনমোহন মন্দিরে যান। হাঁটা পথে বার বারই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি চলে যাচ্ছিলেন তিনি। মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে, অভিষেক আবারও সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যান। কোচবিহার থেকে কেন জনসংযোগ যাত্রা শুরু করলেন, তার ব্যাখ্যা দেন অভিষেক। বলেন, ‘‘আমরা কোচবিহার থেকে সংযোগ যাত্রা শুরু করেছি। তার কারণ, বাংলায় কিছু রাজনৈতিক দল আছে, যারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে শব্দবন্ধ যেটা ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গ, আমি তার ঘোর বিরোধী। আমি বলেছি বাংলায় গৌড়বঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ বলে কিছু নেই। আমি বলেছি, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ একটাই বঙ্গ, সেটা পশ্চিমবঙ্গ। আমি আজও সে কথা বলছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি এলাকা বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমরা যেখান থেকে কর্মসূচি শুরু করছি। দিনহাটা থেকে , জায়গাটার নাম বামনহাট ফুটবল ময়দান। একেবারে বাংলার প্রথম সীমান্ত। যেখান থেকে বাংলার ভৌগোলিক মানচিত্র শুরু হচ্ছে। আমরা মনে করি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার হল বাংলার মাথা। বাংলার শান্তি, সম্প্রীতি, শৃঙ্খলা নষ্ট করে পৃথক রাজ্য তৈরির যে ডাক, তার বিরুদ্ধে তৃণমূল লড়াই করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির একাংশ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’’ বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-র দাবি, ‘‘তৃণমূল দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। মানুষ তৃণমূলের নাম শুনলেই ক্ষেপে উঠছেন। তা থেকে চোখ ঘোরাতেই এমন কর্মসূচি ও অবান্তর কথা বলা হচ্ছে।’’
এ দিন সফরের শুরু থেকেই অভিষেক ছিলেন খোশমেজাজে। মন্দিরে পুজো দিয়ে সুনীতি রোড হয়ে দিনহাটা পৌঁছন। আচমকা সুনীতি রোডের পাশে লিচুতলা থেকে রেলবস্তিতে ঢুকে পড়েন। বাড়ির ভিতরে ঢুকে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। টুম্পা বর্মণ, ফুলেশ্বরী বর্মণরা জানান, রেলের জমি এখনও তাঁদের নামে পাট্টা হয়নি। অভিষেক আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘চিন্তা করবেন না। আমি আছি।’’ এর পরে, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া তাঁবুতে পৌঁছেও খোশমেজাজেই দেখা যায় অভিষেককে। সেখানে ফুটবল মাঠে অভিষেকের জন্য একটি বড় তাঁবু তৈরি করা হয়েছে। তা ঘিরে আরও দশটি তাঁবু রয়েছে সেখানে। পুরো মাঠ কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। চারদিকে পুলিশ পাহারা রয়েছে। প্রধান ফটকে রয়েছে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁদের অনুমতির বাইরে কারওভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। অফিসের তাঁবুর সঙ্গেই একটি বসার জায়গা করা হয়েছে। সেখানে বসে বেশ কিছু ক্ষণ সাংবাদিকদের সঙ্গে গল্প করেন তিনি। পরে জেলা নেতাদের নিয়েবৈঠক করেন।
সীমান্তের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘‘এমন কোনও রাজনৈতিক নেতা এর আগে এলাকায় রাত কাটাননি। তাতে ভাল লাগছে। তবে সীমান্তের অনেক সমস্যা। সে সব সমাধানে উনি উদ্যোগী হবেন বলে আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy