প্রতীকী ছবি।
ঠাশ ঠাশ দ্রুম দ্রাম নিয়ে বহু কালই খটকার প্রশ্ন নেই বঙ্গজীবনে। ক্লাসে মিহিদানা না-পেলে যে চিনে পটকার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে দেখিয়েছিল খোদ পাগলা দাশু। হাউই, তুবড়ি, তারাবাজির আকাশ-অভিযানের স্পর্ধা নিয়ে রবি ঠাকুরও কম কাব্যি করেননি। কিন্তু কালীপুজোর সঙ্গে এই সব বাজির সম্পর্ক খুঁজতে হোঁচট খান ইতিহাসবিদেরা। কালীপুজোর এ রীতি নেহাতই আনকোরা বলে তাঁদের অভিমত।
তবে তার মানে এই নয়, নানা কিসিমের বাজি অনেক কাল আগের বাঙালির অপরিচিত ছিল। সতেরো শতকে আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যে চিতোরের রাজা রতন সিংহ আর সিংহলের রাজকুমারী পদ্মাবতীর বিয়ে উপলক্ষে কম বাজি ফাটেনি! ‘নানা বন্ন বাজি পোরে / অনেক হাওই উরে’ বা ‘মহাতাপ ফুলঝারি’র কথা তাতে স্পষ্ট লেখা! কিন্তু কোথাও কালীপুজার কথা নেই।
১৮০২ থেকে ১৮১২ বাঙালির সমাজ জীবনের দর্পণ উইলিয়ম ওয়ার্ড সাহেবের জার্নাল তন্ন তন্ন করে ঘেঁটেছেন উনিশ শতকের বাংলা, বাঙালি বিষয়ক গবেষক, প্রবীণ অধ্যাপক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, “কিন্তু তাতে বাঙালির নানা আচার, অনুষ্ঠান পার্বণের খুঁটিনাটি, ফিরিস্তি থাকলেও কালীপুজোয় বাজি পোড়ানোর গল্প এক ফোঁটা নেই।” আরও অর্ধ শতক বাদের বহুচর্চিত হুতোম পেঁচার নকশাতেও তেমন কোনও প্রমাণ নেই। কলকাতার নাগরিক-জীবনের যাবতীয় আমোদের কথা লেখা হলেও বাজি-প্রসঙ্গ কার্যত নেই। “আসলে কালীপুজো ও বাজির সম্পর্ক অনেকটাই প্রেম, ভালবাসা ও দামি হিরের সম্পর্কের মতো। ইতিহাস বা লোকাচার নয়, নিছকই বাণিজ্যের শর্ত মেনে তৈরি হয়েছে! এর মধ্যে প্রাচীন পরম্পরাটরা নেই", অভিমত বাঙালির সংস্কৃতি বিষয়ক প্রাবন্ধিক তথা প্রাক্তন আমলা ও সাংসদ জহর সরকারের। তাঁর ধারণা, ১৯৪০ এর দশকের পরে শিবকাশীর বাজির কারবারের বাড়বাড়ন্তের হাত ধরে বাজির প্রকোপ এতটা ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে।
কেউ কেউ মনে করেন উত্তর ভারতের দেওয়ালি থেকে বাঙালি বাজি ফাটানো ধরেছে। তবে দেওয়ালিতেও মোগল আমলটামলে অন্তত আলো জ্বললেও বাজির বেশি চল দেখেন না ইতিহাসবিদেরা। তবে বিংশ শতকের গোড়ায় কলকাতার বনেদি বাড়িতে তুবড়ি, রংমশাল বিশারদ মামা, কাকাদের দেখা মিলত। মার্বেল প্যালেসের মল্লিকবাড়ির হীরেন মল্লিক ঠাকুমার কাছে গল্প শুনেছেন, তাঁর বিয়ের পর বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে কালীপুজোর তত্ত্ব আসত! এবং শ্বশুরমশাইয়ের কোলে বসে বালিকা বধূটি বাজির শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠতেন। সেটাও ১৯২০-৩০ এর সময়ের কথা। এই বাজি-সংস্কৃতি তখনও প্রধানত বড়-বাড়ির ব্যাপার ছিল বলে হীরেনবাবুর ধারণা।
শিবকাশীর দুই ভাই আইয়া এবং সন্মুগা নাডারদের তামিলনাডু থেকে ভারতজয়ের আখ্যান, ১৯৪০এর পরের। তত দিনে বিস্ফোরক আইন ঢিলে হয়ে বাজি তৈরির সুবিধা হয়েছে। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে চললেও শব্দবাজির বিকট অত্যাচার ১৯৭০এর দশক থেকে। অত এব কালীপুজোর সঙ্গে বাজির সম্পর্কে ঐতিহ্যের যোগ খোঁজাটা বেশ হাস্যকর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy