দুই মত নিয়ে দলের অন্দরে নানা যুক্তি-প্রতিযুক্তির লড়াই চলছে। ছবি এএফপি।
আরজি কর-কাণ্ডে আন্দোলন কি পদ্মচিহ্নের পতাকা নিয়ে হবে? না কি সেই পতাকা ছাড়া? যাতে সেটিকে ‘নাগরিক’ আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায়।
দ্বন্দ্বে রাজ্য বিজেপি।
রাজ্যে উত্তপ্ত আবহে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল এই প্রশ্নে এককাট্টা থাকতে চেয়েও পারছে না। সম্প্রতি আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে দলের প্রথম সারির সব রাজ্য নেতাকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে। তবে মঞ্চ এক হলেও মত এক নয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বার বার ‘পতাকাহীন’ আন্দোলনের কথা বলছেন বটে। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের তাতে সায় নেই। বরং তাঁরা দলীয় পতাকা নিয়েই আন্দোলনে থাকতে চান। দুই মত নিয়ে দলের অন্দরে নানা যুক্তি-প্রতিযুক্তির লড়াই চলছে বটে। কিন্তু দলীয় বৈঠকে এ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্য দলের বৈঠক বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার সময়ে শুভেন্দুর প্রস্তাব নিয়ে কোনও কথা হয়নি।
দলের সেই অবস্থান সরাসরি না হলেও প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, বিজেপি নয়, ‘বাংলার মানুষের বিরোধী দলনেতা’ হিসাবেই ওই প্রস্তাব দিয়েছেন শুভেন্দু।
আরজি কর-কাণ্ডের জেরে সাধারণ মানুষ পথে নামার সময়েও রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কিছুটা দোনামোনায় ছিল। সেই আন্দোলন সমর্থন করা ঠিক হবে না বেঠিক, তা ভাবতে ভাবতেই প্রথম কয়েকটা দিন কেটে যায়। শেষে সমর্থন করলেও দল সরাসরি সাধারণের আন্দোলনে যোগ দেয়নি। সিপিএমের অনেক পরিচিত মুখকে সাধারণের মিছিল বা বিক্ষোভ সমাবেশে দেখা গিয়েছে। বিজেপির ক্ষেত্রে তেমন হয়নি।
১৪ অগস্ট রাতে গোটা বাংলার মানুষের ঢল দেখার পরে বিজেপি দলীয় কর্মসূচি নেয়। ১৫ অগস্ট রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঘোষণা করেন, পর দিন থেকেই দল পথে নামছে। তার পর থেকেই দলীয় পতাকা নিয়ে একের পর এক কর্মসূচিতে রয়েছে বিজেপি।
সেই আন্দোলনে শুভেন্দু যোগ দিলেও প্রথম থেকেই তিনি ‘রংহীন’, ‘পতাকাহীন’ মিছিলের কথা বলে এসেছেন। গত সোমবার তিনি জাতীয় পতাকা হাতে নবান্ন অভিযান করার কথা বলেন। বলেন, নির্যাতিতার বাবার পক্ষে ডাক দেওয়া হোক। তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতিতার বাবাকে মিছিলে আসতে হবে না। উনি শুধু কলটা (আহ্বান) দিন। উনি শোকার্ত হৃদয়ে আছেন। উনি শুধু জাতীয় পতাকা হাতে অভিযানের কথা বলুন। আমরা বাকিটা যা করার করে দেব।’’
শুভেন্দু এই ‘আমরা’ বলতে কাদের কথা বুঝিয়েছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। শমীক বলেন, ‘‘১৩ বছর ধরে তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার হতে পারেনি। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যবাসীর বিরোধী দলনেতা হয়ে উঠেছেন। তাই এমন আর্জি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ যখন সর্বব্যাপী, সর্বস্পর্শী এবং তা রাজনৈতিক বিরোধিতা মুছে দিয়েছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি পতাকা ছাড়া আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।’’ বস্তুত, শুভেন্দু জানিয়েছেন আগামী মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানেও তিনি ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে অংশ নেবেন।
শুভেন্দু এমন বললেও বিজেপির অন্য কোনও নেতা ওই অভিযানে যোগ দেওয়ার কথা জানাননি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘ওই কর্মসূচি বিজেপির নয়। তাই কারও যোগদানের প্রশ্ন নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিই আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে। ওই অভিযানে যোগ দেওয়ার জন্য দলের কাছে নির্দিষ্ট কোনও আবেদন এলে তখন ভেবে দেখা হবে।’’
তবে ওই অভিযানে বিজেপির অনেক নিচু স্তরের নেতা-কর্মী যোগ দিতে পারেন বলে মনে করেন রাজ্য নেতাদের অনেকে। যদিও স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কেউ দলীয় পতাকা নিয়ে যেতে পারবেন না। রাজ্য বিজেপিতে ‘পতাকাহীন’ রাজনীতির বিপক্ষের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছি। সাধারণ মানুষের স্লোগান প্রথমে ছিল ‘বিচার চাই’। এখন সেটা ‘ইস্তফা চাই’ হয়ে গিয়েছে। আমরা এই বদলটা চেয়েছিলাম। ফলে এখন আর পতাকা ছেড়ে আন্দোলনের কোনও মানে হয় না। মানুষ এখন প্রধান বিরোধী দলের দাবিকে এবং রাজনীতিকেই সমর্থন করছেন।’’
শুভেন্দু অনুগামীদের আবার বক্তব্য, সাধারণ মানুষের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দলের শক্তি ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর এটাই সময়। এক নেতার কথায়, ‘‘জাতীয় পতাকা হাতে আন্দোলন হলেও কারা প্রধান উদ্যোক্তা, সেটা মানুষ বুঝতেই পারবে। তাতেই দলের লাভ।’’
‘জয়পতাকা’ কি পতাকা ধরে আসবে? না ছেড়ে? দ্বন্দ্বে রাজ্য বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy