শহুরে গৃহহীনদের আবাস পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি পৃথক খাত তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্দেশিকা জারি করে ওই পৃথক খাত (বাজেট হেড) তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট আবাসগুলির দৈনন্দিন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে যাতে কোনও সময়ে অর্থাভাব দেখা না দেয় কিংবা নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্প অর্থের অভাবে পিছিয়ে না যায়, তা আটকাতেই রাজ্য নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক দফতরের অধীনে এই খাত চালু করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০২৪–’২৫ অর্থবর্ষে ওই পৃথক বাজেট খাত থেকেই গৃহহীনদের আবাসগুলির খরচ সংক্রান্ত নানা বিষয় পরিচালিত হয়েছে। তবে ২০২৫–’২৬ অর্থবর্ষে এই খাত চালু থাকবে কিনা, তা এখনও সরকারি ভাবে জানানো হয়নি। প্রশাসনের একাংশের অবশ্য আশা, চলতি অর্থবর্ষেও এই খাত চালু রাখার জন্য পদক্ষেপ করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, এই প্রথম রাজ্যে গৃহহীনদের আবাস পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট খাত তৈরি করা হয়েছে। যা প্রশাসনিক ও মানবিক দিক থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। রাজ্য অর্থ দফতরের অনুমোদন নিয়ে এই খাত তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নগর জীবিকা মিশনের (ন্যাশনাল আর্বান লাইভলিহুড মিশন বা এনইউএলএম) অধীনে গৃহহীনদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলির মূল উদ্দেশ্য হল তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। কিন্তু, আগে কোনও নির্দিষ্ট বাজেট খাত না থাকায় আবাসগুলির রক্ষণাবেক্ষণ বা জরুরি পরিষেবায় প্রায়ই অর্থ সংক্রান্ত সমস্যার মুখে পড়তে হত স্থানীয় প্রশাসনকে। সেই সমস্যা দূর করতে এবং আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই খাতটি তৈরি হয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই পৃথক বাজেট হেড চালুর ফলে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলির পরিচালনা আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত এবং দ্রুত হবে। পাশাপাশি, অডিট এবং খরচের পর্যালোচনাও আরও সহজ হবে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “অনেক সময়েই আশ্রয়কেন্দ্রে হঠাৎ কোনও মেরামতি বা পরিষেবা খাতে খরচের দরকার পড়ে। ফলে এ বার আর আগের মতো আর্থিক অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। দ্রুত কাজ করা সম্ভব হবে।”
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ২০১৮ সালে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, শহরে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ৭,২৭২। কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের মতে, কোভিডের পরে ওই সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে। কারণ, অতিমারি বহু মানুষের জীবিকা কেড়ে নিয়েছিল। অনেকেই তখন কাজের খোঁজে শহরে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই আশ্রয় নেন সংশ্লিষ্ট আবাসগুলিতে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)