নদিয়ার হরিণঘাটায় ঝোপজঙ্গলে ঘেরা একটেরে বাড়িটায় গত মাস তিনেক ফেরেনি বছর বত্রিশের অমিত পণ্ডিত। মদের ঠেকে গুলি চালিয়ে এক জনকে জখম করার পর থেকেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনুপম দত্তের স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
ছেলেটার হাত চলত তবলায়, ঢোলে, নালে। অর্কেস্ট্রার দলে হাতে উঠত পার্কাসন। আর পেট চালাতে অটো বা গাড়ির স্টিয়ারিং। সেই হাতই যে আগ্নেয়াস্ত্রের ট্রিগার চালাচ্ছে, মাস তিনেক আগে তা টের পেয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। এ বার পানিহাটির কাউন্সিলর অনুপম দত্তকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে খুনের খবর শুনে গোটা এলাকা স্তম্ভিত।
নদিয়ার হরিণঘাটায় ঝোপজঙ্গলে ঘেরা একটেরে বাড়িটায় গত মাস তিনেক ফেরেনি বছর বত্রিশের অমিত পণ্ডিত। মদের ঠেকে গুলি চালিয়ে এক জনকে জখম করার পর থেকেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর-বারাসত থেকে বর্ধমান-কাটোয়ায় খুঁজে বেরিয়েও পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। সোমবার গ্রামে পৌঁছেছে কাউন্সিলর খুনে তার ধরা পড়ার খবর।
বাড়ি বলতে ইটের গাঁথনি, উপরে টিন আর টালির ছাউনির এক কামরা ঘর। খোলা বারান্দা। উঠোনের উপরে বাঁশঝাড়। সে বাড়ির বাসিন্দা অমিতের এক দিদি। আছেন আরও দুই দিদি। এক জন মানসিক ভারসাম্যহীন, অন্য জন এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। এক দাদা ছিলেন, বহু দিন আগেই মারা গিয়েছেন। ছোটবেলায় মারা গিয়েছেন বাবা-মা। দিদি বাড়ি-বাড়ি কাজ করেন। খুনের ঘটনায় ভাই ধরা পড়েছে শুনে এ দিন আর কাজে যাননি। রান্না চাপিয়েছেন, কিন্তু মুখে খাবার ওঠেনি।
এখন পাড়াপড়শিও তাঁদের এড়িয়ে চলছেন। এক প্রতিবেশী বলেন, “বাজনা বাজানো ছেলেটা অনেক পাল্টে গিয়েছে। ওকে আর এই গ্রামে ফিরতে দেব না।” কোন দলের লোক সে? পাড়াপড়শি বলছেন, এক সময়ে কিছু দিন তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে যেত অমিত, পরে আর তেমন ভাবে কোনও দল করত না।
অমিত যেখানকার বাসিন্দা, সেখান দিয়েই বনগাঁ ও বসিরহাট সীমান্তে নানা জিনিস পাচার হয়। দুষ্কৃতীদের ‘ট্রানজ়িট পয়েন্ট’ হিসাবেও প্রশাসনের কাছে পরিচিত ওই এলাকা। পুলিশ সূত্রের খবর, বছর ছয়েক ধরে বাড়তি উপার্জনের আশায় বারাসত ও ব্যারাকপুর লাগোয়া এলাকায় মাটি-বালির কারবারে জড়িয়েছিল অমিত। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসারের কথায়, ‘‘গাড়ি চালাতে গিয়ে এমন কিছু লোকের সঙ্গে অমিতের আলাপ হয়, যারা অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত। সে এক জন বোড়ে, পিছনে কারা আছে তা নিশ্চয়ই সামনে আসবে।’’
আর ঝুপসি ঘরে বসে অমিতের দিদি বলছেন, “আমাদের সঙ্গে অনেক দিন ভাইয়ের যোগাযোগ নেই। কিন্তু ছোট ভাই তো, ফেলে দিই কী করে? আমি আসল সত্যিটা জানতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy