জি ডি বিড়লা সভাঘরে বাল্মীকিপ্রতিভা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
দস্যু রত্নাকর থেকে ঋষি হয়ে ওঠা বাল্মীকি যে-শোকের প্রণোদনায় শ্লোক সৃষ্টি করেছিলেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত শোক ছিল না। সেটা ছিল ক্রৌঞ্চমিথুনের অপমৃত্যুজনিত শোক। পুত্রশোকের মতো ব্যক্তিশোক থেকে মুক্তিনৃত্যে উত্তরণ ঘটল বর্ধমানের যুবক বাপির। হপ্তা দু’য়েক আগে মহড়া শুরুর সময়ে পুত্রশোকে মুষড়ে ছিলেন তিনি। যাবজ্জীবন দণ্ডিত ওই মুসলিম বন্দি অ্যাডিনো ভাইরাসের ছোবলে তাঁর ছোট্ট ছেলেটিকে হারিয়েছেন। বাপি আগে কখনও নাচগান করেননি। কিন্তু ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র নাচের ছন্দ তাঁর রক্তেও মুক্তির দোলা দিয়েছে।
ঠিক যেমন আগেও দেখা গিয়েছে এ রাজ্যের সংশোধনাগারের অন্দরে। অতিমারির কয়েক বছর পার করে রবিবার সন্ধ্যায় আবার নাচ, গান, নাটকে মুক্তির স্বাদ পেলেন বন্দিরা। তিন বছর বাদে রবিবার জি ডি বিড়লা সভাঘরের একটি আমন্ত্রিত শোয়ে সংশোধনাগারের আবাসিকদের নিয়ে ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ মঞ্চস্থ হল অলকানন্দা রায়ের পরিচালনায়। বঙ্গের বন্দিদের কাছে রবীন্দ্রনাথের বহুপরিচিত এই নৃত্যনাট্য অচেনা নয়। তবু এ বারের মঞ্চায়নের মধ্যে রয়েছে আবারও শূন্য থেকে শুরু করার জেদ। কারণ, আগের শোয়ের কুশীলবেরা প্রায় কেউই এখন সংশোধনাগারে নেই। একেবারে আনকোরা শিল্পীদের দেখে, বেছে বিস্তর খেটেখুটে অনুষ্ঠানের জন্য গড়েপিটে নিয়েছেন অলকানন্দা। তিনি বলছেন, “তৈরি হতে মাত্র দু’তিন সপ্তাহ হাতে পেয়েছি। এর মধ্যে শেষ দশ দিন নাগাড়ে মহড়া চলেছে। তাই সব কিছু পুরোটা মনের মতো করা যায়নি।” যেমন, এই শোয়ে গরাদের ও-পারের আবাসিকদের সঙ্গে বাইরের কয়েক জনও অভিনয় করেছেন। অলকানন্দা বললেন, “মদন বলে জেলের একটি খুব সুন্দর চেহারার লম্বা ছেলেকে আমার বাল্মীকি হিসেবে পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু ওঁকে তৈরি করতে ছ’টি মাস লাগবে। তাই ছেলেটিকে দস্যুর পার্টই দিতে হল। বাল্মীকি করছেন বাইরের এক জন শিল্পী।” তবু প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ২১ জন পুরুষ আবাসিক এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের চার মহিলাকে তৈরি করতে হয়েছে অলকানন্দাকে। দস্যুদলের নৃত্য-অভিনয়ের ফুর্তিতে মাতোয়ারা শিল্পীরা।
প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর কথায়, “অতিমারির পরে সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দিদের সংশোধনাগারের ভিতরের জীবনচর্যাও আমরা দ্রুত ছন্দে ফেরাতে চাইছিলাম। ভাল লাগছে, এত তাড়াতাড়ি ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র শো সারা হয়ে গেল।” বন্দিদের নিরাময়ের অঙ্গ হিসেবে ২০০৭ থেকে নাচ, নাটকের চর্চায় জোর দিচ্ছিলেন কারা দফতরের তৎকালীন আইজি বংশীধর শর্মা। বহরমপুরে প্রদীপ ভট্টাচার্যের ‘তাসের দেশ’ নাটক নিয়ে শুরু হয়। তার পরে অলকানন্দার বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে। আর তিনটি শো হলে বন্দিদের নিয়ে বাল্মীকিপ্রতিভার ১০০তম অভিনয় সম্পন্ন হবে। আরও চারটি শো হলেই অলকানন্দার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ২০০তম উপস্থাপনাটিও দেখা যাবে। পশ্চিমবঙ্গে সংশোধনাগারের আবাসিকদের এই সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গোটা দেশেই ছাপ ফেলেছে। নতুন শোয়ের আমন্ত্রণ এলে আবার বাল্মীকির মঞ্চায়ন হবে বলে জানান কারা দফতরের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy