মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
এ বারের শিক্ষক দিবসেও রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব বা মোবাইল ফোন কেনার জন্য অর্থ দেবে রাজ্য সরকার। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় যে লকডাউন হয়েছিল, তাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার পথ সুগম করতে তাদের ট্যাব বা মোবাইল কেনার জন্য অর্থ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে করোনা পরিস্থিতি কাটলেও রাজ্য সরকারের তরফে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের এই সুবিধা দেওয়া চালু রাখা হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠান হবে, যেখানে তিনি প্রতীকী ভাবে ছাত্রছাত্রীদের এই অর্থ তুলে দেবেন। আর ওই দিনই রাজ্য সরকার ১৬ লক্ষ অ্যাকাউন্টে ট্যাব কিংবা মোবাইল কেনার অর্থ বাবদ ১০ হাজার টাকা করে পাঠাবে।
শিক্ষক দিবসের দিন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৬ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব বা মোবাইল দিতে উদ্যোগী হয়েছে। এই উদ্যোগটি মূলত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। ট্যাব দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল শিক্ষায় সড়গড় করে তোলা। এই ট্যাব বিতরণ কর্মসূচিটি মূলত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি, মাদ্রাসা এবং সংখ্যালঘু বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরও এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্তমান প্রজন্মকে ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই তিনি রাজ্য সরকারের তরফে এই উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিক্ষার ডিজিটালকরণে জোর দিচ্ছে সরকার, তাই মোবাইল এবং ট্যাবলেটের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের উদ্দেশ্য, ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা উন্নত মানের শিক্ষা পাবে এবং তাদের দক্ষতা বাড়বে। এই প্রযুক্তিতে ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস এবং শিক্ষামূলক অ্যাপ ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী করা হয়েছে। তা ছাড়া, ই-বুক এবং অন্যান্য ডিজিটাল শিক্ষার সামগ্রী সহজেই এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া যাবে। ফলে, শিক্ষার্থীরা সহজে শিক্ষামূলক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে এবং তারা প্রযুক্তিগত জ্ঞানেও সমৃদ্ধ হবে। তাই রাজ্য সরকারের তরফে এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প।
তবে এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের পদক্ষেপে রাজনীতি দেখছে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি। এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘তরুণের স্বপ্নের প্রকল্পের মোবাইল/ট্যাব কেনার টাকা এ বছর এত তাড়াহুড়ো করে দিচ্ছে কেন, সেটা সবাই বুঝতে পারছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ভিত নড়িয়ে দিচ্ছে। তাই তাড়াহুড়ো করে টাকা অ্যাকাউন্টে দিয়ে ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করতে চাইছে সরকার। এতে কিছু লাভ হবে না। সরকারের মাথাদের বলব সুকান্ত ভট্টাচাৰ্যর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটা আর এক বার ভাল করে পড়ে নিতে।’’ জবাবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিজন সরকার বলেন, ‘‘আমার প্রশ্ন হল, রাজ্য সরকার কি এই প্রথম ট্যাব বা মোবাইল ফোন কেনার অর্থ দিচ্ছে? করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে যখন থেকে লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তখন থেকে রাজ্য সরকার মোবাইল ফোন এবং ট্যাব কেনার অর্থ দেওয়া শুরু করে। সেই প্রক্রিয়া এখনও চালু রয়েছে, এতে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনে সুবিধাই হয়েছে। আর পুজোর আগে যদি এই অর্থ পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল ফোন এবং ট্যাব কেনে, তাতে রাজ্যের অর্থনীতির মঙ্গল হবে। সমালোচকদের এই কথাও বোঝা উচিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকেরা যে আন্দোলন করছেন, তার ফলে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলির আয় ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এই আন্দোলনে উস্কানি দিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির হাত থাকতে পারে বলেই আমি মনে করি। এমন সময় ছাত্রছাত্রীদের জন্য নেওয়া রাজ্য সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করা বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির কাম্য নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy