২০১৭ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য আবু তালেব খানকে এবং ২০১৮ সালে মহম্মদ আলিকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার পর খাতায়-কলমে প্রায় চার বছর আগেই যে-ছাত্র আলিয়া থেকে ‘বহিষ্কৃত তিনি।
টিএমসিপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের (ডান দিকে) সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন। তবে টিএমসিপির দাবি ছবিটি বেশ কয়েক বছর আগের।
উপাচার্যের সঙ্গে ‘গুন্ডামির কথাবার্তা’ তিনি যে শুরু করেছিলেন, খোদ অভিযুক্তই তা স্বীকার করছেন। গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল বলছেন, ‘‘ওঁর (আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলি) কটু কথা শোনার পরে আমি গুন্ডামির কথাবার্তা শুরু করেছি।’’ এই স্বীকারোক্তির পরে উপাচার্য-নিগ্রহের যে-অভিযোগে গিয়াসউদ্দিনকে শ্রীঘরে ঢোকানো হয়েছে, তা আর ঠিক অভিযোগের পর্যায়ে থাকে না বলে শিক্ষা ও পর্যবেক্ষক শিবিরের অভিমত। বস্তুত, উপাচার্য-নিগ্রহের ব্যাপারটাকে তিনি নিজস্ব নিত্য আচরণের তালিকায় এনে ফেলেছেন বলেই অভিযোগ! ২০১৭ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য আবু তালেব খানকে এবং ২০১৮ সালে মহম্মদ আলিকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
খাতায়-কলমে প্রায় চার বছর আগেই যে-ছাত্র আলিয়া থেকে ‘বহিষ্কৃত’, বহিষ্কৃত তাঁর প্রিয় সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকেও, সেই গিয়াসউদ্দিনের দাপট এখনও অব্যাহত কী ভাবে? গায়ে বহিষ্কৃতের তকমা সেঁটে যাওয়ায় আলিয়ায় তাঁর দাপট যে কমেনি, শুক্রবার হাড়ে হাড়ে সেটা টের পেয়েছেন উপাচার্য! শনিবার সংবাদমাধ্যমে উপাচার্যকে অকথ্য গালাগাল ও হেনস্থার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরে গিয়াসউদ্দিনকে চিনে গিয়েছে আমজনতাও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গিয়াসউদ্দিন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন আলিয়ায়। কিন্তু বিভিন্ন পেপারে সাপ্লিমেন্টারি পাওয়ায় সেই পাঠ শেষ হয়েছে কি না, ধন্দে অনেকেই। এ-হেন পড়ুয়াকেই ২০১৪-য় বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি বা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি করা হয়। গিয়াসউদ্দিনের দাপট বাড়তে থাকে। ২০১৭-য় নিউ টাউনে আলিয়া ক্যাম্পাসের হস্টেল থেকে টাকা তোলা, ক্যান্টিনের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৭-য় তৎকালীন উপাচার্য আবু তালেব খান বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুর এবং হেনস্থার অভিযোগ করেন। গিয়াসউদ্দিনকে সে-বারেও হাজতবাস করতে হয়। ২০১৮ সালে উপাচার্য হন অধ্যাপক মহম্মদ আলি। তাঁকে হেনস্থা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি নষ্ট করে বহিষ্কৃত হন গিয়াসউদ্দিন। তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের ইউনিট থেকেও বার করে দেওয়া হয় তাঁকে। তার পরেও শুক্রবার ক্যাম্পাসে ঢুকে দলবল নিয়ে তিনি কী ভাবে উপাচার্যকে হেনস্থা করলেন, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আলিয়ার এই বহিষ্কৃত ‘কীর্তিমান’ অবশ্য শনিবার রাতেই (তখনও তিনি গ্রেফতার হননি) সে-সবের উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রাক্তন বা নবীনের প্রশ্ন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায় হয়েছে। সবাই নীরব। তাই প্রতিবাদ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। উপাচার্য আমার সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেননি। অপেক্ষা করিয়ে আমাকে কটু কথা বলেছেন। ওঁর কটু কথা শোনার পরে আমি গুন্ডামির কথাবার্তা শুরু করেছি।’’ ভাষা নিয়ে গিয়াসউদ্দিনের যুক্তি, ‘‘আমি নবারুণ ভট্টাচার্যকে অনুসরণ করি। গালাগালি একটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ, ক্রোধের প্রকাশ। গালাগালি না-করলে খুনোখুনি বেড়ে যাবে। ওটা গালাগালি নয়, ওটা প্রতিবাদ। গালাগালি না-করলে এই ভিডিয়ো ভাইরাল হত না। পিএইচ ডি-র প্রবেশিকায় যে-দুর্নীতি হয়েছিল, সেই সত্য সামনে আসত না।’’
টিএমসিপি অবশ্য শনিবার রাতেই গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব বলছেন, তাঁদের সংগঠন কস্মিনকালেও গিয়াসউদ্দিনের কুকর্ম সমর্থন করেনি। সচিত্র প্রমাণ দাখিলের ঢঙে গিয়াসউদ্দিন অবশ্য তাল ঠুকে বলছেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আমার ছবি আপনার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাব? কত ছবি চাই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy