অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ভারতমাতার এই ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে সারা শহরেই দু’দিন ধরে উত্তেজনার আবহ। তারই মধ্যে আলোচনার বৃত্তে উঠে এসেছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জলরঙে আঁকা ‘ভারতমাতা’ ছবিটি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যার প্রদর্শনী শুরু হয়েছে রবিবার থেকে। এ দিন ভিক্টোরিয়ার চারটি গ্যালারি সংস্কারের পরে সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই আলাদা ভাবে নজর টেনেছে ‘ভারতমাতা’!
ভিক্টোরিয়া সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে একটি প্রদর্শনীর সময়ে এই ‘ভারতমাতা’ কয়েক দিনের জন্য জনসমক্ষে আনা হয়েছিল। পাঁচ বছর পর এ বারই তা স্থায়ী ভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষিতে ‘ভারতমাতা’র প্রদর্শনকে অত্যন্ত ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদদের অনেকেই। কারণ, ১৯০৫ সালে জলরঙে আঁকা ওই ‘ভারতমাতা’-র অর্থ বর্তমানে বদলে গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে এ দিন বেলুড় মঠের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখে একাধিক বার শোনা গিয়েছে ‘ভারত মাতা কী জয়’। যার প্রেক্ষিতে ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় বলছেন, ‘‘বর্তমানে যে ভারতমাতার কথা বলা হচ্ছে, তা হল উগ্র হিন্দুত্ববাদের। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁকেছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে, যখন সকলে একজোট হয়ে লড়েছেন।’’ তাঁর আরও সংযোজন, এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভারতমাতার প্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ওই ছবিটি এঁকেছিলেন, তখন প্রথমে সেটির নাম দেওয়া হয়েছিল বঙ্গমাতা। পরবর্তীকালে ওই ছবিরই ভারতমাতায় উত্তরণ ঘটে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই বিতর্ক বা ব্যাখ্যায় যেতে নারাজ। বরং কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি সাবধানী, কী ভাবে ১১৫ বছর আগে আঁকা চিত্রটি ঠিক মতো সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়ে। কারণ, তৈলচিত্রে একাধিক রঙের প্রলেপ পড়ায় সেটি আবহাওয়ার সঙ্গে তবু খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু জলরঙে আঁকা যে কোনও ছবিই ‘বর্মহীন’। ফলে বেশি সংবেদনশীল জলরঙের অন্যতম শত্রু হল ধোঁয়া ও ধুলো।
আরও পড়ুন: ধর্মের ‘জুজু’, পুণ্যার্থীদের শিবির এ বারও সেই ময়দানে
এখন ভিক্টোরিয়ার তথ্যই বলছে, বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ পর্যটক ভিক্টোরিয়ায় যান। তাঁদের পোশাক তো বটেই, জুতোতেও ধুলো থাকে। যদিও দেশের মধ্যে সব থেকে পরিষ্কার স্মৃতিসৌধের মর্যাদা পাওয়া ভিক্টোরিয়ার ভিতরের আবহ যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ‘ভারতমাতা’-সহ জলরঙে আঁকা ছবিগুলির ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছেন কর্তৃপক্ষ।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এখন না হয় অনেক ভাল মানের কাগজ বেরিয়েছে। কিন্তু তখনকার দিনের কাগজে আঁকা ছবির সংরক্ষণ করাটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। যে সংরক্ষণবিদেরা এর পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের জন্যই সেই কাজ সম্ভব হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: মাঝেরহাট সেতুর জট কাটবে কি, পথ চেয়ে রাজ্য
যেমন ভাবে সংস্কার করে ২৫ বছর পরে এ দিনই খোলা হয়েছে রয়্যাল গ্যালারি। যেখানে ‘একটি ক্যানভাসে’ রাশিয়ার শিল্পী ভাসিলি ভিরিসচ্যাগিনের আঁকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈলচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। ২৪ ফুট চওড়া ও ১৭ ফুট উচ্চতার যে ছবির শুধু ফ্রেমেরই রং আনা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। সংস্কারের আগে যখন রয়্যাল গ্যালারি থেকে অন্য সমস্ত ছবি সরানো হয়েছিল, তখন এই বিশালাকৃতি ছবিটিকে সরানো যায়নি। ফলে ভেঙেচুরে যাওয়া রয়্যাল গ্যালারির চাঙড় পড়ে যাতে ছবিটি নষ্ট না হয়ে যায়, সে ব্যাপারেও সতর্ক ছিলেন কর্তৃপক্ষ। ১৮ বাই ১২ ফুটের আরও একটি ছবি, যার নাম ‘দিল্লি দরবার’, যেটি ভিক্টোরিয়ার সংগ্রহে থাকা দ্বিতীয় বৃহত্তম ছবি, তারও প্রদর্শনী হয়েছে এ দিন। জয়ন্তবাবু বলছেন, ‘‘শুধু এগুলিই নয়, আরও অনেক সামগ্রী, যা এত দিন জনসমক্ষে আনা যায়নি, তা-ও সংরক্ষণের পরে প্রদর্শিত হচ্ছে। স্মৃতিসৌধের ফার্স্ট ফ্লোর গ্যালারিতে দিল্লির ন্যাশনাল মিউজ়িয়ামের সামগ্রীও প্রদর্শিত হচ্ছে। ফলে এক দিক থেকে এ দিনটি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিন তো বটেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy