শুক্রবার গোলমালের পরে গ্রেফতার হয় কয়েক জন। তাদের টোটোতে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থানায়। —নিজস্ব চিত্র।
জলে ঘেরা পাঁচটি এলাকা নিয়ে সন্দেশখালি থানা। একে আন্তর্জাতিক সীমান্ত-লাগোয়া, তার উপরে এই জায়গার উপর দিয়ে পাচার-চোরাচালানের আশঙ্কা যথেষ্ট। ইডি এবং সিআরপি জওয়ানদের উপরে শেখ শাহজাহানের অনুগামীদের হামলার পরে এই মুহূর্তে এই এলাকা রাজ্যের অন্যতম ‘হটস্পট’। অথচ এ হেন সন্দেশখালি থানায় পুলিশের গাড়ি সাকুল্যে দু’টি! সঙ্গে নদীপথ বেষ্টিত এলাকায় ভরসা একটি লঞ্চ। এলাকায় ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি ফাঁড়িতে পুলিশকর্মীরা মোটর বাইকেই ডিউটি দেন। আসামিকে ধরে আনতে গেলে উঠতে হয় ভাড়া করা টোটোয়! বন্দিকে নিয়ে যেতে অনেক সময়ে বসিরহাট থেকে পর্যন্ত ডাকতে হয় গাড়ি। পরিস্থিতি এমনই যে, শুক্রবার বড় গন্ডগোলের পরে সন্দেশখালি এসে টোটোয় উঠতে দেখা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিআইজিকেও! প্রশ্ন উঠছে, সীমান্ত-ঘেঁষা এমন সংবেদনশীল এলাকায় পুলিশের হাল এমন ‘ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার’-এর মতো কেন?
গত কয়েক দিন ধরে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ দুই জেলা পরিষদ সদস্য শিবপ্রসাদ হাজরা (ওরফে শিবু) এবং উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে নাগাড়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। শিবপ্রসাদের খামার, পোলট্রিতে আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধদের একাংশ। তিনি ‘বেপাত্তা’। গ্রেফতার হয়েছেন উত্তম। এলাকার পরিস্থিতি এখনও এতটাই থমথমে যে, ইন্টারনেট বন্ধ, ১৪৪ ধারা বহাল। ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ।
এই যেখানে পরিস্থিতি, সেই সন্দেশখালি থানার পুলিশের বাহন পর্যন্ত ঠিক ভাবে নেই কেন? রবিবার বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরেই এই থানার পরিকাঠামোর উন্নতি করার ক্ষেত্রে নজর দেব আমরা।” যদিও এত দিন তা কেন দেওয়া হয়নি, পুলিশের তরফে তার সদুত্তর মেলেনি।
জেলিয়াখালি-সহ পাঁচটি দ্বীপের মতো এলাকায় পুলিশকে নদী পেরিয়ে টোটো, মোটরবাইকে উঠতে হয়। থানা সূত্রেই অভিযোগ, সেই মোটরবাইকও সংখ্যায় অপ্রতুল। শুক্রবার জেলিয়াখালিতে শিবুর পোড়া খামারের কাছে যখন ধুন্ধুমার চলছে, ডিআইজি (বারাসত) সুমিত কুমার সেখানে বাহিনী নিয়ে এসে পৌঁছেছিলেন। সন্ধ্যায় ফিরতি পথে তাঁকেও উঠতে হয়েছে টোটোয়।
পুলিশ সূত্রেই খবর, পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্পে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী নেই। এসআই এবং এএসআই মিলিয়ে ১০ জন। কনস্টেবল ২৭ জন। থানা এবং ক্যাম্প মিলিয়ে ২৮০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার। রাতবিরেতে কোনও ঘটনা ঘটলে যাতায়াতে সমস্যা যে বিস্তর, সে কথা মানছেন পুলিশকর্মীরা। থানা সূত্রে খবর, পুলিশের দু’টি গাড়ি থাকলেও তা ধামাখালিতে থাকে। সন্দেশখালি গেলে, থানার ওসি নিজেও টোটো বা বাইকে উঠতে বাধ্য হন!
বসিরহাট জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “এখানে আগুন লাগলেও আমাদের ছুটতে হয়। কারণ, দমকল নেই। আসন্নপ্রসবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলেও অনেক সময়ে পুলিশের ডাক পড়ে।” তিনি জানান, আদালতে ধৃতদের নিয়ে যেতে হলে বসিরহাটে হেডকোয়ার্টার্সে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে গাড়ি পাঠিয়ে আসামিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এই পরিকাঠামো নিয়ে থানা সামলানো হত কী ভাবে? উত্তরে মুখে কার্যত কুলুপ স্থানীয় পুলিশের মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy