Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Social Media

1176 hoax: বঙ্গজীবনে ফিরে এল ১১৭৬-এর ছায়া

ইতিহাসগত ভাবে বঙ্গজীবনে ১১৭৬ অবশ্য মন্বন্তরের জন্য স্মরণীয়। সেই বিভীষিকার স্মৃতি আজও ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের নানা ঐতিহাসিক দলিলে ছড়িয়ে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৮
Share: Save:

১০৮ হলে তাও বোঝা যেত! তার বদলে ১১৭৬। বিচিত্র নম্বরের কুহকিনী মায়ায় মজেছে সমাজমাধ্যম। অতিমারি ধ্বস্ত একটা সময়ে ভাইরাসের তাড়া খেয়ে যখন কার্যত দিশেহারা দশা, তখন একটি নম্বর আঁকড়ে অনেকেই ভাগ্য বদলাতে চাইছেন।

ফেসবুক বা টুইটারেই চোখে পড়ছে নম্বরের মহিমা। অনেকেই লিখছেন, “১১৭৬ হরে কৃষ্ণ। সেই সঙ্গে জাতির উদ্দেশে আহ্বান। প্রথমে আমিও বিশ্বাস করিনি! কিন্তু লিখতেই, সাংঘাতিক কাণ্ড। পর পর ভাল ঘটনার হিড়িক।’’ এ হেন নম্বরের হয়ে সওয়াল করতে হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার গীতার তত্ত্ব কিংবা চৈতন্যদেবের বাণীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। হরে কৃষ্ণর আগে ১১৭৬ বসানো মানেই না কি পুরো ধন্বন্তরীর দাওয়াই। খটমট মন্ত্র লেখার পরিশ্রম নেই, কিন্তু লিখলে সহজতম রাস্তায় মন্ত্রের সব গুণই অব্যর্থ ভাবে ফলবে।

ইসকনের কর্তাব্যক্তিদেরও কানে গিয়েছে এমন নম্বর মহিমা। কলকাতায় ইস্কনের সভাপতি রাধারমণ দাস শুনেই হাসছেন। “সনাতন ধর্মে ১০৮ বার বীজ মন্ত্র জপ করার রীতি আছে। কিন্তু ১১৭৬! সে তো জম্মে শুনিনি।” নবদ্বীপের পুরোহিত মশাই সুশান্ত ভট্টাচার্যও ধর্ম বা শাস্ত্রের সঙ্গে এমন নম্বরযোগ মনে করতে পারছেন না।

ইতিহাসগত ভাবে বঙ্গজীবনে ১১৭৬ অবশ্য মন্বন্তরের জন্য স্মরণীয়। সেই বিভীষিকার স্মৃতি আজও ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের নানা ঐতিহাসিক দলিলে ছড়িয়ে। ২০২০ থেকে শুরু হওয়া অতিমারির দাপটে কিংবা এই ২০২২-এ নতুন করে শুরু হওয়া সংক্রমণের ধাক্কায় ইতিহাসের স্মৃতিবাহী সংখ্যাটি জনচেতনায় হানা দেওয়ায় কেউ কেউ অদ্ভুত সমাপতনও দেখছেন।

সঙ্কটে পয়া নম্বরের শরণাগতি অবশ্য নতুন কিছু নয়। অনেকেই নিজের জন্মতারিখ বা জন্মসাল সংক্রান্ত নানা অঙ্ক কষে শুভ কাজে হাত দেন। ‘বিল্লা নম্বর ৭৮৬’র মহিমা নিয়ে তো একাধিক কালজয়ী হিন্দি ছবিও হয়েছে। তার মধ্যে ‘দিওয়ার’-এর ক্লাইম্যাক্স পর্বে অমিতাভ বচ্চনের হাত থেকে ৭৮৬ লেখা ধাতব গয়নাটি পড়ে যেতেই তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। কর্ণের রথের চাকা ডুবে যাওয়ার মতো একটা উৎকণ্ঠা ঢুকে পড়ে দর্শকের মনে।

“আমাদের ভেতরের নানা উৎকণ্ঠার সুযোগ নিয়েই নম্বর নিয়ে নানা ছেলেমানুষি চলছে”, বলছিলেন মনস্তত্ত্ববিদ শিনা মিশ্র ঘোষ। তাঁর কথায়, “দেখতে হবে, কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি এর পিছনে আছেন কি না! প্রধানমন্ত্রীর কথায়, যে দেশে শিক্ষিত লোকেও থালা বাজিয়ে বা প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাইরাস তাড়াতে যায়, সে দেশে এমন নম্বর চর্চা খুব বিচিত্র কি? এ সব না-করে মন দিয়ে মাস্কটা পরলেই অনেক কাজ হত।”

এত কিছুতেও রসিক বাঙালির মেজাজটি অবশ্য অটুট। মাহফুজ আলি ওরফে মালির কার্টুনে এই ১১৭৬-এর অনুষঙ্গেও উঠে এসেছে ফেলুদার ‘ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা’। সে গল্পে টিয়াপাখিকে কায়দা করে সিন্দুকের চাবিকাঠির নম্বর শিখিয়ে রেখেছিলেন এক বৃদ্ধ। অতিমারির সঙ্কটেও ১১৭৬ কার ভাগ্যের তালা খোলে, তাই নিয়েই আপাতত জমে উঠেছে মশকরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy